টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে করা মামলা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার

অপরাধ আইন আদালত টাঙ্গাইল সদর ভূঞাপুর রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডামি নির্বাচন আয়োজন ও ভোট চুরির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশন সিইসিসহ সংশ্লিষ্ট ১৯৩ জনের নামে আদালতে দায়েরকৃত মামলার ঘটনায় নানা নাটকীয়তার শেষে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করা করেছেন ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম।

 

বুধবার, ২১ মে সকালে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভূঞাপুর উপজেলা আমলি আদালতে বাদী বিএনপি ওই নেতা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। টাঙ্গাইল আদালতের পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরআগে আদালতের বিচারক রুমেলিয়া সিরাজাম মামলার বাদী ও বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু রায়হান খানের বক্তব্য শুনেন এবং মামলাটি নথিজাত করার আদেশ দেন।

পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান জানান, আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রুমেলিয়া সিরাজাম মামলার বাদীর বক্তব্য লিপিবব্ধ করেন এবং বাদী পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনেন। অত:পর আদালত মামলাটি নথিজাতের আদেশ দেন। এতে মামলাটি আর চালানোর প্রয়োজন রইল না।

গত ১৯ মে সোমবার ওই আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এই মামলায় স্থানীয় ভূঞাপুরে ৫ সাংবাদিককে আসামি করায় জেলা জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এরপ্রেক্ষিতে ২০ মে মঙ্গলবার নানা নাটকীয়তার পর মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ সাংবাদিকের নাম বাতিল চেয়ে বাদী কামরুল হাসান আদালতে অনাপত্তিপত্র দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু রায়হান খান জানান, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ডামি ও ভোটচুরির নির্বাচন আখ্যায়িত করে দায়ের করা মামলাটি বাদী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

গত ১৯ মে দায়েরকৃত মামলায় তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মোট ১৯৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ভূঞাপুর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামি ১৩ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

এরমধ্যে ২০ মে মঙ্গলবার ৫ সাংবাদিককে মামলা থেকে প্রত্যাহারে বাদী অনাপত্তিপত্র প্রদান করেন। সর্বশেষ বুধবার বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন। বাদী কামরুল হাসান মামলাটি চালাবেন না বলে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

ভূঞাপুরের কয়েকটি ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, রাজধানীর উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরে এক নেতার বাসায় মঙ্গলবার দুপুর ও বিকালে মামলার বিষয়ে দুই দফায় গোপন বৈঠক হয় এবং ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়নের ভারই গ্রামে উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বাসায় মঙ্গলবার রাতে অপর একটি বৈঠক শেষে মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন তা জানাতে তারা অস্বীকার করেন। তবে মামলার বাদী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।

তারা আরও জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতার নির্দেশে মামলাটি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওই নেতা কেউ যাতে ‘মামলা বাণিজ্য’ করতে না পারে সে বিষয়ে খুবই কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে, মামলাটি দায়ের হওয়ার পর পাঁচ সাংবাদিকের নাম আসামির তালিকায় থাকায় জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরে ওই পাঁচ সাংবাদিকের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহারে বাদীর ‘অনাপত্তি’র পর বুধবার মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।

মামলার বাদী ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ভারই গ্রামের মৃত মমতাজউদ্দিন আহম্মেদের ছেলে কামরুল হাসান জানান, ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা দায়েরকৃত মামলাটি প্রত্যাহার করতে বলেন। প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি বিএনপির উপর মহল থেকে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি কাল সারাদিন ঢাকায় ছিলেন। মামলাটি প্রত্যাহার হবে- এমন কথা তিনি শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে বসে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল জানান, ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন আয়োজন ও ভোট চুরির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সিইসি, তৎকালীন রিটার্নং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হওয়ার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহারের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এ ধরণের মামলা দায়ের করতে কেউ জেলা বিএনপির সঙ্গে কোনোপ্রকার পরামর্শ করেনি, প্রত্যাহার করতেও কেউ জানায়নি।

তিনি জানান, কেন মামলা দায়ের করা হলো- আবার কেনইবা প্রত্যাহার করা হলো বিষয়টি সম্পর্কে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত তথ্য জানার পর বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীন জানান, এ ধরণের মামলা দায়ের করার আগে জেলা বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন ছিল। ডামি নির্বাচন আয়োজন ও ভোট চুরির ঘটনার সঙ্গে যাঁরা প্রকৃত অর্থে জড়িত তাঁদের নামেই মামলা করা উচিত। এ ধরণের মামলায় সাধারণত বাদী বা তার সঙ্গীয় লোকজনের ‘বাণিজ্য’ করার মানসিকতা থাকে। তবে মামলাটি প্রত্যাহারের কথা জানতে পেরে তিনি বাদীকে স্বাগত জানান।

উল্লেখ্য, গত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের নির্দেশক্রমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার একটি ডামি নির্বাচনের আয়োজন করেন। ওই নির্বাচনে অন্যের ভোট চুরি করে টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তানভীর হাসানকে (ছোট মনির) সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত করা হয়। এতে দেশ ও জনগণের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এ ঘটনার প্রতিকারের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১৯ মে টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভূঞাপুর উপজেলা আমলি আদালতে মামলা দায়ের করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *