
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়েছে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীতে। শ্রমিকরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন টাঙ্গাইল শাড়ি। টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীগুলো ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবার ঈদেও শাড়িতে এসেছে বাহারি ডিজাইন আর নতুনত্ব।
তবে, মজুরি কম পাওয়ায় হতাশ তাঁতীরা। ঈদের কয়দিন পরেই বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ। এই দুই উৎসবে নারী-পুরুষ সবাই নতুন পোষাক পড়েন। নারীদের উৎসবের পোষাক মানেই শাড়ি। যে কোনো অনুষ্ঠানেই আবহমান বাঙ্গালী নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। এর মধ্যে আবার তাদের টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির প্রতি রয়েছে আলাদা টান। এবার ঈদে টাঙ্গাইল শাড়িতে বাহারি ডিজাইন আর নতুনত্বের পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেও তৈরি করা হচ্ছে শাড়ি। তাই, সব মিলেয়ে দম ফেলার ফুসরত নেই তাঁত শ্রমিকদের। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মেতেছেন কর্মযজ্ঞে।
জানা যায়, তাঁতের রাজধানী টাঙ্গাইলের পাথরাইল ছাড়াও বাজিতপুর, এলাসিন, করটিয়া, বল্লা, এনায়েতপুর, পোড়াবাড়ি, চারাবাড়ি, বাঘিলসহ সকল তাঁতপল্লীগুলোতে তাঁতের খটখট শব্দে মুখোরিত। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও কাজ করছেন। কেউ সুতা ছিটায় উঠানোর কাজে, কেউ সুতা পাড়ি করার কাজে, আবার কেউ সুতা নাটাইয়ে উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে, আগের তুলনায় কমেছে তাঁত ঘরের সংখ্যা।
ব্যবসায়ীরা জানান, সবনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। পাওয়ার লুমের কারণে হ্যান্ডলুমের তৈরি শাড়ি কম চলে। এদিকে, হ্যান্ডলুমের শাড়ির দামও বেশি। তারপরও আশা করছি এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ পাশাপাশি হওয়ায় বিক্রি ভালো হবে।
তাঁত শ্রমিকরা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আগে সপ্তাহে তিনটি শাড়ির তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু, এখন সপ্তাহে চারটি শাড়ি তৈরি করছি। ব্যস্ততা বাড়লেও বর্তমানে আমাদের মজুরি কম। কম মজুরি দিয়ে আমাদের সংসার চালানো দূরুহ হয়ে উঠেছে। আগের মতো জমজমাট নেই তাঁতপল্লী। তবুও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি আমরা।
তাঁত শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে এ পেশায় কাজ করছি। ঈদ উপলক্ষে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আমি জামদানি শাড়ি তৈরি করছি। সপ্তাহে তিনটি শাড়ি তৈরি করতে পারি। এতে মজুরি পাওয়া যায় ২২শ’ থেকে ২৩শ’ টাকা। আগের মতো এ পেশায় লাভ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বর্তমানে বাজারে সূতার দাম বেশি।
তাঁত শ্রমিক আব্দুল জলিল বলেন, আমি ২৩ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে রয়েছি। ঈদ উপলক্ষে বালুচুরি শাড়ি তৈরি করছি। প্রতি পিস শাড়িতে ৬০০ টাকা মজুরি দেয়। সপ্তাহে পাঁচটি শাড়ি তৈরি করছি এখন। এতে আমাদের খাওয়া খরচ দিয়ে পুষে না। ঈদের দুই তিন মাস আগে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ধান কাটতে একদিন মজুরি পাওযা যায় ৮০০ টাকা। কিন্তু, দুইদিন সময় লাগে একটি তাঁতের শাড়ি বানতে। তবুও ধান কাটার শ্রমিকের সমান মজুরি পাওয়া যায় না। আমাদের মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।
এদিকে, দেশের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে ক্রেতারা শাড়ি কিনতে ভিড় করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী ও জেলা শহরের শোরুমগুলোতে। স্বাচ্ছন্দে নিজের জন্য এবং প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার জন্য পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা।
টাঙ্গাইল শহর থেকে আসা রাব্বি মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি। আগের থেকে কিছুটা দাম বেশি। তবুও টাঙ্গাইল শাড়ির মান ভালো থাকায় চাহিদা বেশি।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এবার নতুন ডিজাইয়ের শাড়ি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া উপযোগী অনুযায়ী ‘ভেজিটেবল ডাই’ নামের নতুন শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। রোজার ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ কাছাকাছি হওয়ায় আশা আশবাদি বিপুল পরিমানের শাড়ি বিক্রি হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশীয় বাজার অনেক ছোট হয়ে আসছে। আমরা বিদেশি বাজারের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাচ্ছি। বিগত সময়ে পাথরাইলে পাঁচ হাজার তাঁত ছিলো। কিন্ত এখন বর্তমানে মাত্র ৪০০ তাঁত রয়েছে। চাহিদা কমাতে আমাদের উৎপাদনও কম হচ্ছে।