ঘাটাইলে শিক্ষা সফরের চারটি স্কুলবাসে ডাকাতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর

অপরাধ ঘাটাইল দুর্ঘটনা শিক্ষা

ঘাটাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষা সফরের চারটি স্কুলবাস ডাকাতদের কবলে পড়েছে। মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোর সোয়া চারটার দিকে ঘাটাইল-সাগরদীঘি আঞ্চলিক সড়কের লক্ষণের বাধা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা বাস থেকে লুট করেছে নগদ টাকা, স্বর্ণ ও স্মার্টফোন। এ নিয়ে গত ১০ দিনে এই সড়কে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, ময়মনসিংহ বিভাগের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে চারটি বাস নিয়ে ওই স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শিক্ষা সফরের জন্য রওনা দেন নাটোরের গ্রীনভ্যালি পার্কের উদ্দেশ্যে। ভোর সাড়ে চারটার দিকে বাস চারটি ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল-সাগরদীঘি আঞ্চলিক সড়কের সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছলে তারা ডাকাত দলের কবলে পড়েন।

এ সময় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান সামনের বাসে ছিলেন। হঠাৎ তিনিসহ অন্যরা খেয়াল করেন সড়কের মাঝ বরাবর গাছের গুঁড়ি। তিনি বুঝে ফেলেন এই কাজ ডাকাতদের। সতর্ক করেন সবাইকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় গাড়ির জানালা ও গেট। কিছু বুঝে উঠার আগেই ১০-১২ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঘাত শুরু করে গাড়িতে। ডাকাতরা পেছনের গাড়ি থেকে তাদের মালামাল লুট করা শুরু করে। এরই মধ্যে তিনি ফোন করেন ৯৯৯ নম্বরে। অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে তিনটি গাড়ির যাত্রীদের থেকে মালামাল লুট করা শেষ।

সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ডাকাতরা নগদ টাকা নিয়ে গেছে দেড় লাখ। স্বর্ণ দেড় ভরি। স্মার্টফোন ১০টা। এ ঘটনায় মারধরের শিকার হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর সাখাওয়াত হোসাইন রবিন (২৫) ও অভিভাবক শহিদুল্লাহ তালুকদার (৩৯)।

সাখাওয়াত হোসাইন রবিন বলেন, ‘আমি ছিলাম দুই নম্বর গাড়িতে। ওই গাড়িতে ছিল শুধু ছাত্রী। ডাকাতরা আমার কাছে থেকে মোবাইল নেওয়ার পর যখন ছাত্রীদের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি বাধা দিই। এর ফলে তারা আমাকে দায়ের উল্টো পিঠ দিয়ে আঘাত করে।’ ডাকাতদের অস্ত্র ও ভয়ঙ্কর রূপ দেখে গাড়িতে জ্ঞান হারান কৃষি বিষয়ের শিক্ষক আবুল কালাম (৫২)।

ডাকাতির সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি সদস্য লিয়াকত হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যেই ওইস্থানে (লক্ষণের বাধা) ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বুধবারও একই স্থানে ডাকাতি হয়েছে।

মালিরচালা গ্রামের লিটন ভূইয়া বলেন, ‘সড়কে গাছ ফেলে একই কায়দায় বুধবারের ডাকাতির ঘটনায় মোটরসাইকেল ও কাঁচামালের ট্রাক আটকে তাদের কাছ থেকে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।’

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে গাছ ফেলে শিক্ষা সফরে যাওয়ার পথে চারটি স্কুলবাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যতটুকু জানতে পেরেছি সাতটি মোবাইল ও দুই হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে ডাকাতরা। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকার লোকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।

একই সড়কে ১০ দিনে তিন ডাকাতি: এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে একই সড়কের সন্ধানপুর ইউনিয়নের ফকিরচালা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের কবলে পড়ে ১০টি ট্রাক, সিএনজি ও মোটরসাইকেল। ডাকাতরা চালকদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ স্মার্টফোন লুট করে নিয়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন। চালকদের মারধরও করা হয়।

গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক মাসে ঘাটাইলে পাঁচ বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা ওই পাঁচবাড়ি থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে সাগরদীঘি পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ডাকাতি। গত ১০ দিনে সড়কের একই স্থানে তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতের দল লুট করে নিয়ে যায় চালকসহ যাত্রীদের মালপত্র। শুধু তাই নয়, মারধরের শিকার হয় চালক ও যাত্রী। ভাঙচুর করা হয় যানবাহন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *