চলন্তবাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিন ডাকাত গ্রেফতার

অপরাধ আইন আদালত টাঙ্গাইল সদর মির্জাপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেফতার করেছে।

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার সাভার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। শনিবার দুপুরে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে শুক্রবার ভোরে বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদি হয়ে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর সদর উপজেলার লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম মুহিত (৩০), শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভার উপজেলার টানগেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান শরীফ (২৮)। তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত হওয়া ৩টি মোবাইল ফোন, ১টি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

শনিবার সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংএ জানান, ডাকাতির ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার ১৪ ঘন্টার মধ্যেই এ ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব অবহেলায় মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সামায়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গত সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের ঢাকা কোচ (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) বাসটি ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এসময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫জন যাত্রী ছিল। পরে রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে এবং হেমায়েতপুর থেকে আরও ১০ থেকে ১২জন যাত্রী নিয়ে বাসটি পুনরায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা করে। ঘটিকার সময় বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে পৌছালে চা-বিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চা বিরতির সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও তিন থেকে চারজন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে বাসটি রওনা করে।

বাসটি ওইদিন রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮ থেকে ৯জন যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত একসঙ্গে দাড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সকলকে চুপ থাকতে বলে। এ সময় তাদের মধ্যে তিনজন অজ্ঞাতনামা ডাকাত গাড়ী চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে টানা হেচরা করে কিল ঘুষি মেরে তাকে উঠিয়ে নিয়ে পেছনে উল্টা করে রাখে। ডাকাতদের মধ্যে থেকে একজন ডাকাত চালকের আসনে বসে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাসটি চালিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়।

পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়ার নিকটে ফুটওভার ব্রিজের প্রায় ১০০ গজ পশ্চিম পার্শ্বে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর পৌছালে ডাকাতদলের ৬ থেকে ৭ জন সদস্য গাড়ীতে থাকা অন্যান্য যাত্রীদেরকে ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রূপাসহ সকল মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পরে ডাকাতদলের সদস্যরা মির্জাপুরের নাটিয়াপাড়া নাছির গ্লাসের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে রওনা করে। তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের কালিয়াকৈর, কোনাবাড়ীসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ায় এবং এই সময়ের মধ্যে যাত্রীদেরকে ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। ডাকাতের সময় নারীদের স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়ার সময় দুই নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানী করা হয়।

পরবর্তীতে চালক গাড়ী নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে গাড়ীতে থাকা যাত্রীরা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনাটি পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। তখন গাড়ীতে থাকা যাত্রীরা ডাকাতির বিষয়ে বিস্তারিত জানালে কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকার টহলরত পুলিশ মির্জাপুর থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিলে চালক গাড়ী নিয়ে মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ডে যায়। তখন কয়েকজন যাত্রী ও গাড়ীর সুপারভাইজার মির্জাপুর থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত করলে মামলা না নেওয়ায় তারা পুনরায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পরে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানা মোড়ে গেলে গাড়ী থেকে তিন থেকে চারজন যাত্রী নেমে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়ীর চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে সন্দেহে গাড়ীটি আটক করে। তাদের আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *