
নিজস্ব প্রতিবেদক: অপচনশীল বর্জ্য হিসেবে পরিচিত প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে এবং এর মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। প্লাস্টিক সামগ্রী অত্যধিক ব্যবহারের ফলে মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও ধ্বংস হচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধাসহ ক্যান্সারের কারণ হিসেবে এ প্লাস্টিককে দায়ী করা হচ্ছে। অনেক প্লাস্টিকের বোতলে বিসফেনল থাকে।
এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে এ যৌগ প্রবেশ করলে শিশুর ওজন হ্রাসের আশঙ্কা থাকে এবং শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় ও বয়স্কদের থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ হয়। শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ রোধ হয়। প্লাস্টিক কণায় অতিরিক্ত ক্ষতিকর উপাদানের কারণে মানুষের লিভার, কিডনি ও পাকস্থলীর মারাত্মক ক্ষতি হয়। নিজেদের প্রয়োজনেই প্লাস্টিকপণ্য ব্যবহার বর্জন করে আমাদেরকে বিকল্প পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘অপচনশীল বর্জ্য হিসেবে পরিচিত প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প ব্যবহারে সচেতনতামূলক কর্মশালা’য় বক্তারা এসব কথা বলেন।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা, ডেপুটি সিভিল সার্জন মুহম্মদ আজিজুল হক, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন কবির, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ প্রমুখ।
বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন, প্লাস্টিকপণ্যের বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। সাধারণত উদ্ভিদকুল, জলজপ্রাণি, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণিরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য প্রাণির বাসস্থান, খাদ্য সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করছে। শুধু উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণিই নয়- মানুষও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, পৃথিবী প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। শুধু আমেরিকায় প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন টনসহ ১৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য মাটি ও পানিতে পতিত হয়। এ গুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ পুনঃচক্রায়ন হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন। পৃথিবীব্যাপি প্রতি মিনিটে প্রায় ১০ লাখ প্লাস্টিক বোতল সাগরে পতিত হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের তুলনায় প্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
তারা আরও বলেন, প্লাস্টিক অপচনশীল বর্জ্য বলে এটি পরিবেশে ৫০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে মাটি, পানি ও বায়ুর দূষণ বাড়ছে। এর প্রভাব সরাসরি আমাদের জনজীবনে পড়ছে।
এ সময় পরিবেশ সচেতন জেলার বিশেষজ্ঞরা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা, সামাজিক সংগঠন ও এনজিওর প্রতিনিধিরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।