ভূঞাপুরে বিদ্যালয়ের মাঠে বিটুমিন পোড়ানোয় পাঠদান ব্যাহত

অপরাধ পরিবেশ বাসাইল শিক্ষা

ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুর উপজেলায় আকালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে সড়ক নির্মাণ কাজের বিটুমিন ও পাথর পোড়ানোর ফলে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোয়া। এতে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের শ্বাস নিতে যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি মারাত্নক স্বাস্থ্যঝুকিতেও রয়েছে কোমলমতি শিশুরা। এছাড়া, এসব নির্মাণ সামগ্রী রাখায় ক্লাস কার্যক্রম ও খেলাধুলা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের আকালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে সড়ক নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। বিদ্যালয়ের গা ঘেষে রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় গ্যাস সিলিন্ডার। মাঠের এক পাশে চুলা তৈরি করে সেখানে পোড়ানো হচ্ছে বিটুমিন। জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গার্মেন্টসের পরিত্যক্ত কাপড়। মাঝখানে রাখা হয়েছে বালু, পাথর, মিক্সার মশিন ও একটি ট্রলি গাড়ি। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠটি পুরোপুরি দখল নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের বারান্দায় খেলাধুলা করছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের মাঠ দখল হওয়ায় তারা যতটুক পারছে আনন্দ ও খেলাধুলা করছে। মাঠ থাকতেও বিভিন্ন ধরনের খেলা থেকে বঞ্চিত এসব শিক্ষার্থীরা। অনেকেই আবার মাঠের একপাশে ধুলার মধ্যে দাড়িয়ে আছে। মাঠ দখল থাকায় নিয়মিত অনুশীলন না করার কারনে কয়েকদিন পরই আন্ত স্কুল প্রতিযাগিতা, উপজেলা পর্যায়ে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়ন- নিকরাইল বাজার ভায়া চর অলোয়া সড়কের সংস্কার কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাপস ট্রেডার্স। এলজিইডির আওতাধীন ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার ৩.৮০ কিলোমিটার সড়কের কাজ করছে ঐ প্রতিষ্ঠান। এর কাজ শেষ হবে চলতি বছরের মার্চ মাসে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ে আসলেও খেলাধুলা করতে পারি না। মাঠে বালু পাথর ফেলা হয়েছে। মাঠের মধ্যে যখন মবিলসহ বিভিন্ন জিনিস পাড়ানাে হয় তখন কালাে ধোয়ায় থাকা যায় না। এছাড়া মিক্সার মেশিনের বিকট শব্দে জানালা বন্ধ করে পড়তে হয়।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবুল হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই মাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে তো কোন সমস্যা হচ্ছে না। অতি দ্রুতই কাজ শেষ হবে এবং নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেয়া হবে।

তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয় খােলার আগ থেকেই মাঠে এসব নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে, যা সরিয়ে নিচ্ছে না ঠিকাদার। বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শিশুরাও মাঠে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৭২জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

আকালু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, মাঠে কাজ করার সময় ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। বিদ্যালয়ের জানালা দরজা বন্ধ রেখে ক্লাস নিতে হয়। সামনেই খেলাধুলার বিভিন্ন প্রতিযােগিতা রয়েছে। বিয়ষটি এলজিইডি, শিক্ষা অফিসসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জানানাে হলেও কােন ব্যবস্থা হচ্ছে না।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, মাঠ কেউ বিনামূল্যে দেয় না। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ঠিকাদার মাঠ ব্যবহার করছে না। সেখানে যদি জায়গা না থাকতাে তাহলে সড়কের ঢালাইয়ের কাজ গাজীপুরের কালিয়াকৈর বা চদ্রা থেকে তৈরি করে সেখানে ফেলতে হবে। এতে কাজ নিম্নমানের হবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, নির্মাণ সামগ্রী রাখার বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবগত করেছেন দুইদিন আগে। বিদ্যালয় খােলার আগেই সেগুলো রাখা হয়েছিল। এতে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় সেগুলাে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার পর সেগুলাে সরানাে হবে বলে এলজিইডি ও ঠিকাদার জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *