টাঙ্গাইলে লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন

অর্থনীতি কৃষি টাঙ্গাইল সদর পরিবেশ ভূঞাপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে হলুদ ফুল। লাভজনক হওয়ায় কৃষকরাও সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। এ যেন বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। সবুজের মাথার ওপর হলুদের দোলা এ যেন আবহমান বাংলার চিরচেনা এক মনোমুগ্ধকর রূপ। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রবিশস্যের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে এমনই দৃশ্য।

বড় বাসালিয়া আর সেনবাড়ির বিস্তৃত ফসলী মাঠ আগাম জাতের সরিষার হলুদ ফুলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। শিশির ভেজা হলুদ ফুলে পাপড়িতে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন দুলছে। এই এলাকায় বন্যার সময় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। বন্যার পানিতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে টাঙ্গাইল সদরের গালা ইউনিয়নের ছোটবাসালিয়া সেনবাড়ির বিলে বেড়াতে আসে। নৌকা নিয়ে বেড়ায়, পিকনিকের আমেজে মজা উপভোগ করে। বন্যার পর পরই এই এলাকার কৃষকেরা সরিষার বীজ ফেলা শুরু করে। আর শীতের শুরু থেকে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে শুধু হলুদ রঙের ছড়াছড়ি সরিষা ফুল।

প্রচলিত কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কারন সরিষা এখন লাভজনক ফসল। চলতি মৌসুমে কৃষকের সরিষা চাষে বেশী আগ্রহী হয়েছেন কারন গত মৌসুমে স্থানীয় হাট বাজারে সরিষার দাম ভালো পেয়েছে। সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে, দিগন্ত জোড়া বিস্তৃত ফসলী মাঠ। চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফসলি মাঠে আরো সরিষা চাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছেন। অনেকে ফসলী মাঠে জলাবদ্ধতার কারনে রবিশস্য আবাদ করতে পারবেন না। তবে আগাম জাতের সরিষা ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে। মৌমাছিরাও মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, যা দেখে কৃষক ও দর্শনাথীদের মন আনন্দে ভরে যাচ্ছে।

বড় বাসালিয়া এলাকাদের কৃষকদের সাথে কথা বলেন জানা গেছে। খরচ কম, পরিশ্রম কম আর সময়েও কম লাগে আবার দাও ভালো তাই সরিষা একটি অত্যন্ত লাভজনক ফসল। বড় বাসালিয়ার দিগন্তজোড়া শুধু সরিষা আর সরিষা। হলুদে ছেয়ে গেছে গ্রাম।

গালা ইউনিয়নের কালিবাড়ী গ্রামের কৃষক আবুবকর বলেন, ৪টি ক্ষেতে চলতি বছর ৬ বিঘা সরিষা আবাদ করেছি। এখন সরিষা হওয়ার পথে। তিনি প্রতি বছর সরিয়া চাষ করেন। সরিষা বুনলে আমাদের নিড়ানী দেওয়া লাগে না। খালি হাল বাইয়া বুনি। বৃষ্টি না হলে দ্রুত বেড়ে উঠে। ফলন হতে ২ মাস লাগে। গতবার থেকে বেশী ফলন করেছেন। গতবার সরিষা ৩ হাজার টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এবারও আশায় আছি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরিষা চাষের এবার লক্ষ্যমাত্রা ৮২ হাজার। উৎপাদন টার্গেট ১ লক্ষ ১০ হাজার ৭০০ মেন্টিকটন। আপাতত মাঠে অর্জিত হয়েছে ৮০ হাজার ৮শত ৪৪ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় সরিষা চাষ বেশি হয়েছে। এদিকে তেল জাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের উদ্দুদ্ধ করতে চলতি মৌসুমে কৃষককে কৃষি প্রণোদনের অংশ হিসেবে বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষা বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমে দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরছে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কিছু স্থানীয় জাতসহ উন্নত জাতের সরিষার ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। সরিষার ফলন বৃদ্ধিতে মৌমাছি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মৌচাষিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সরিষা জমির পাশে বসানোর কাজটিও করছে কৃষি বিভাগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *