ঢাকায় বাস-অ্যাম্বুলেন্স সংঘর্ষে নিহত ঘাটাইলের একই পরিবারের চারজন

ঘাটাইল দুর্ঘটনা শিক্ষা

ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঢাকার সাভারে অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পুড়ে ঘাটাইলের একই পরিবারের চারজন মারা গেছেন। বুধবার, ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

 

নিহতরা হলেন, ঘাটাইল উপজেলার ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও একই এলাকার বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন সিদ্দিকী (৫০), তার স্ত্রী মহসিনা সিদ্দিকী সোনিয়া (৩৫), ছেলে মোহাইমিন ইসলাম ফুয়াদ (১৪) ও শ্যালিকা মাহফুজা আক্তার সীমা (৪০)। মোহাইমিন ইসলাম ফুয়াদ ভবনদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ও তার বাবা মো. ফারুক হোসেন সিদ্দিকী ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

জানা গেছে, স্কুলশিক্ষক মো. ফারুক হোসেন সিদ্দিকী ছেলে মোহাইমিন ইসলাম ফুয়াদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। থ্যালাসেমিয়া রোগে ভোগা ফুয়াদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব থাকায় প্রতিমাসে ঢাকায় গিয়ে তাকে রক্ত দিতে হয়। সে উদ্দেশে বুধবার রাতে পরিবারের সবাই অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় রওনা হন। তাদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি সাভারে পৌঁছালে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চলন্ত দুই বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা পরিবারের চার সদস্য অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

এদিকে পুড়ে যাওয়া লাশ শনাক্ত করতে বিলম্ব হয়। ফলে বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়েছে। তাদের মরদেহ বর্তমানে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো গ্রামের বাড়িতে আনা হবে।

ফুয়াদের চাচা হাবিব সিদ্দিকী বলেন, ফুয়াদকে চিকিৎসা করানোর জন্য বুধবার রাতে তার পরিবার একটি এ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এ্যাম্বুলেন্সটি ঘটনাস্থল পৌঁছালে বাসের ধাক্কায় আগুন লেগে যায়। আগুনে ফুয়াদসহ তার বাবা-মা ও খালা মারা যান। এ সময় এ্যাম্বুলেন্সটির চালক বের হর হওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান।

তিনি আরও বলেন, ফুয়াদের আরেক ভাই ১০ বছর বয়সী ফাহিম বকেটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে। একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে স্বজন ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ভবনদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোত্তালিব হোসেন জানান, নিহত মোহাইমিন ইসলাম ফুয়াদ আমার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার চিকিৎসার জন্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল পরিবারটি। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সাভার ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইনচার্জ মেহেরুল বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউনে ঢাকামুখী লেনে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে একটি বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটলে পেছনে থাকা বাসেও আগুন ধরে যায়। সে সময় ওই বাসের পেছনে থাকা আরও একটি বাসেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্স থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুড়ে যাওয়া একটি বাসের লকারে অর্ধশতাধিক ছাগল পাওয়া গেছে। সবগুলো দ্বগ্ধ হয়ে মারা গেছে।

সাভার ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শিহাব সরকার জানান, খবর পেয়ে রাত দুইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এ সময় দগ্ধ অবস্থায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিস বাসের যাত্রী আহত সাতজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

সাভার হাইওয়ে থানার ওসি সওগাতুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় গাড়ি দুটিতে আগুন লেগে যায়। পরে তা আরও একটি গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে পোড়া গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *