মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুরে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা যেন কাটছেই না। জামুর্কী ইউনিয়নের পাকুল্যা বিলের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন মহেড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষক।
মহেড়া ও ফতেপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর ধলেশ্বরী শাখা নদী ভরাট হওয়ায় কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীটি ভরাট হওয়ায় পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কয়েক বছর ধরে সরিষার আবাদ করতে পারছেন না ওই এলাকার কৃষক। ‘কৃষক বাঁচাতে খাল কাটা হোক’ এই দাবিতে দুই সপ্তাহ আগে মহেড়া ইউনিয়নের শতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলামের কাছে লিখিত পত্র দিয়েছেন তারা।
এলাকাবাসী জানান, যমুনা নদীর ধলেশ্বরী শাখা নদী মহেড়া ও ফতেপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝিনাই নদীতে মিলিত হয়েছে। এই নদী দিয়ে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে লবণ ও পাটভর্তি বড় নৌকা, মালবাহী জাহাজ এবং ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন ধরনের নৌকা চলাচল করত।
এসব জাহাজ ও নৌকা মহেড়া জমিদার বাড়ির ঘাটে এবং ফতেপুর হাটের ঘাটে ভিড়ত এবং এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করত। কালক্রমে ধলেশ্বরী শাখা নদীটি এখন ভরাট হয়ে শুকিয়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। নদীটি ভরাট হওয়ায় অনেক স্থানে নদীর ওপর আবাদ করা শুরু হয়েছে।
মহেড়া ইউনিয়নের মহেড়া, আগ ছাওয়ালী, স্বল্প মহেড়া, গোরাখি গ্রামের কৃষক নদী সংলঘ্ন নিচু জমিতে সরিষা ও বোরো আবাদ করতেন। ওই নদী ছাড়া পানি নিষ্কাশনের আর কোনো খাল না থাকায় জমি চাষাবাদে ওই নদীর পানিই ব্যবহার করতেন ওই এলাকার কৃষক। নদীটি ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনে দেরি হয়। কয়েক বছর ধরে মহেড়া, আগ ছাওয়ালী ও স্বল্প মহেড়া গ্রামের কৃষক গোরাখি এলাকায় কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে শুধু বোরো আবাদ করতেন।
এ মৌসুমেও ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৫-৩০ জন কৃষক ওই এলাকায় মাটি কেটে ড্রেন তৈরি করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করেন। দুইদিন পানি প্রবাহিত হওয়ায় পর মাটি ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
পানি নিস্কাশন বন্ধ হওয়ায় চলতি মৌসুমে পাকুল্যা বিলসহ নিচু এলাকায় বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে ওই এলাকার শতাধিক কৃষক। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করতে পারে সেই দাবিতে পাকুল্যা বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুই সপ্তাহ আগে ওই এলাকার শতাধিক কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলামের কাছে লিখিত আবেদন করেন।
পুলিশে কর্মরত ছাওয়ালী গ্রামের বাচ্চু মিয়া বলেন, ছোটবেলায় দাদার কাছে শুনেছি, এই নদী দিয়ে ভারত থেকে লবন ও পাটভর্তি বড় বড় নৌকা ও জাহাজ আসত। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন চালিত নৌকাও চলাচল করেছে। নদীটি ভরাট হওয়ায় অনেক স্থানে আবাদ করা শুরু হয়েছে।
নগর ছাওয়ালী গ্রামের হুসেন আলী, মহেড়া গ্রামের শাজাহান মিয়া, শামছুল হক, ঠান্ডু মিয়া ও মন্টু মিয়া বলেন, পাকুল্যা বিলে তাদের ৬০০ শতাংশ জমি রয়েছে। তারা ওই জমিতে আগে সরিষা ও বোরো আবাদ করতেন। ধলেশ্বরী শাখা নদীটি ভরাট হওয়ায় ধীরে পানি নামত। কয়েক বছর ধরে সরিষার আবাদ করতে পারি না। বোরো আবাদ করতে পারলেও ২-৩ বছর ধরে তা-ও পিছিয়ে থাকতে হয়। এরপর থেকে তারা দলবেঁধে গোরাখি এলাকায় কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করি। এ বছরও তাই করেছি। দুইদিন পানি প্রবাহের পর আবার ভারাট হয়ে পানি নিস্কাশন বন্ধ রয়েছে। নদীটি খননের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তারা।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ধলেশ্বরী শাখা নদীটি খননে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।