
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল সদরের চারাবাড়ি এলাকার সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদের (এসডিএস) জমি থেকে রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। ওই জমির দলিল বাতিলসহ আদালতে দুটি মামলা চলমান থাকলেও এক মাস ধরে মোজাম্মেল রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে হাইড্রোলিক ড্রাম ট্রাক দিয়ে বিক্রি করছেন। এতে টাঙ্গাইল-তোরাপগঞ্জ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটি বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, গত ১২ মার্চ সদর উপজেলার বেলটিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত আবদুস ছবুর প্রামাণিকের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে মামলা করেন। মামলায় শহরের দিঘুলিয়া এলাকার মৃত শামছুল হকের ছেলে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সখীপুরের কচুয়া রোড আড়াইপাড়া গ্রামের মো. আনছার আলী ছেলে মো. নুরুল ইসলাম, সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মো. ইমান আলীর ছেলে মো. আকবর আলী, মাগুরাটা গ্রামের মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান, স্বদেশ রোড এলাকার মো. সুরুজ্জামানের ছেলে মো. জাকির হোসেনকে বিবাদী করা হয়।
একই দিন মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাদী হয়ে আরেকটি একটি মামলা করেন। মামলায় শহরের দিঘুলিয়া এলাকার মৃত শামছুল হকের ছেলে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সখীপুরের কচুয়া রোড আড়াইপাড়া গ্রামের মো. আনছার আলী ছেলে মো. নুরুল ইসলাম, শহরের পাতুলীপাড়া এলাকার মৃত কলিল উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে মো. ওস্তাগীর হোসেন, একই এলাকার মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে মো. মোকছেদ আলী ও স্বদেশ রোড এলাকার মো. সুরুজ্জামানের ছেলে মো. জাকির হোসেনকে বিবাদী করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার বেলটিয়াবাড়ী গ্রামের মৃত আবদুস ছবুর প্রামাণিকের ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন সিরাজী ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের (আই আর আই) প্রোপ্রাইটর ও মহাপরিচালক হিসেবে এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। যা এসডিএস নামে পরিচিত। ১৯৮৯ সালের ২ মে প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রি হয়। প্রতিষ্ঠানটি বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করা, কৃষি পুনর্বাসন, পশু খামার, মৎস্য খামার, হাস মুরগির খামার, শাক সবজি চাষসহ নানাভাবে প্রান্তিক সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করে আসছিল।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন সিরাজী বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি কারাগারে যান। এ দিকে প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী কমিটির মেয়াদ ১৯৯৯ সালে শেষ হওয়ার পর নতুন কমিটি না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান সম্পদ লুট হয়।
২০১৫ সালে মো. নুরুল ইসলাম ইসলামিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দাবি করে মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছে জমি বিক্রি করেন। মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক সাইনবোর্ডে উল্লেখ করেছেন ক্রয় সূত্রে তিনি ৮০০ শতাংশ জমির মালিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ভেকু ও একটি ড্রাম ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এর ৫০ মিটার দক্ষিণে মাটি কাটা চলমান রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানকার পাহারাদার রিপন আহমেদ জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। এখানে অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তবে দিনের বেলায় কোনো মাটি কাটা হয় না।
টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টি সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, আমি রেজিস্ট্রি করা জমি থেকে মাটি কাটছি। ইতোপূর্বে আদালতে ১৪৪ ধারার মামলা হলে সেটি খারিজ হয়। আমার এ এসডিএসের ভিতরে ছবি তুলতে হলে অনুমতি নিয়ে ছবি তুলতে হবে।
টাঙ্গাইল জজ কোর্টের আইনজীবী মালেক আদনান জানান, মামলা চলমান থাকলে কোনো পক্ষ জমি ভোগ বা সেটি থেকে মাটি কাটতে পারবেন না।
এ বিষয়ে এসডিএসর ম্যানেজার মতিউর রহমান বলেন, মোজাম্মেল হক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি দখল করে মাটি কাটছেন। আমরা পুলিশ প্রশাসন এবং আদালতে মামলা করেছি। তবে কোনো সুরাহ পাচ্ছি না।

 
                             
	 
						 
						