নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে টাঙ্গাইলের সেই আলোচিত বেড়াডোমা ব্রিজের উদ্বোধন করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে ব্রিজের উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক।
জানা যায়, প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার ব্রিজের কাজ চার বছর আগে শুরু হয়। কিন্তু পৌরসভার নির্দেশ না মেনে আওয়ামীপন্থী সাব-ঠিকাদাররা নির্মাণ কাজ শুরুর ছয় মাসের মাথায় নির্মাণাধীন সেতুটি দেবে যায়। এ ঘটনায় পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেতুটি দেবে যাবার ফলে টাঙ্গাইলের পশ্চিমাঞ্চলের সাথে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে গত কয়েক বছর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষের।
ব্রিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল পৌর প্রশাসক শিহাব রায়হান, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান প্রমুখ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (টিপিআইআইপি) আওতায় এলজিইডির অর্থায়নে টাঙ্গাইল শহরের বেড়াডোমা এলাকায় লৌহজং নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ৪১.৭০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি নির্মাণে ব্রিকস অ্যান্ড ব্রিজেস লিমিটেড অ্যান্ড দ্য নির্মিতি (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর। বর্ধিত সময় অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির কথা ছিল গত ৩১ অক্টোবর। নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর চারটি বিলের মাধ্যমে ঠিকাদারকে দুই কোটি ৮০ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৬ টাকা পরিশোধও করা হয়। এরই মধ্যে গত ১৬ জুন দেবে যায় নির্মাণাধীন সেতুটি।
টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী জানান, মুলত সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন টাঙ্গাইল সদর আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনের বাহামভুক্ত কয়েকজন নামধারী ঠিকাদার। ব্রিজের পাইল এবাটমেন্টওয়ালসহ আনুষাঙ্গিক কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলেও মুল স্লাব ঢালাই কাজের আগে নদীর মধ্যে আড়াআড়ি বালির বাঁধ নির্মাণ করে তার ওপর গজারি বল্লি স্থাপন করে সাটার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঠিকাদাররা।
পৌরসভার পক্ষ থেকে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী ও প্রকল্প পরিচালক গজারির বল্লি অপসারণ করে সেখানে স্টিলের পাইপ প্রোলিং করে ঢালাইয়ের জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ দেন। কিন্তু এ নির্দেশনা না মেনে ঠিকাদারের প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। ফলে ঢালাইয়ের ৩১ দিনের মাথায় পানির স্রোতে ব্রিজের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুটি দেবে যায়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এসব কমিটি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেনের বাহামভুক্ত নামধারী ঠিকাদারদের অভিযুক্ত না করে দায় চাপায় নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী, সহকারী প্রকৌশলী রাজিব কুমার গুহ ও উপসহকারী প্রকৌশলী একেএম জিন্নাতুল হকের উপর। তাদেরকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়। পরে ঠিকাদার নিজ অর্থায়নে ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করলে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে নতুন করে সরকারের কোন আর্থিক ক্ষতি হয়নি।
ব্রিজটি উদ্বোধনের পর টাঙ্গাইলে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হলো বলে মনে করেন এলাকাবাসী।