নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল সদর উপজেলা বিএনপি সহসভাপতি ও সদর উপজেলার দাইন্যা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ফারুক হত্যা মামলার বিচার ১১ বছরেও শেষ হয়নি। এ বিলম্বিত হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতা-কর্মীরা।
মামলার বাদীর অভিযোগ, তদন্ত থেকে শুরু করে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে মামলার বিচারকাজে বিলম্বের সৃষ্টি করেছেন। দ্রুত মামলাটির নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, রফিকুল ইসলাম ফারুক টাঙ্গাইল শহরে আকুরটাকুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনি প্রাতভ্রমণে বের হয়ে আকুরটাকুর বটতলা বাজার এলাকায় পৌঁছালে একদল সন্ত্রাসী তাঁকে আক্রমণ করে। গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনার পরদিন তাঁর ছোট ভাই লাভলু মিয়া বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে টাঙ্গাইল সদর থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে।
তদন্তকালে গোয়েন্দা পুলিশ মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে শাহজাহান মিয়া নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার নির্দেশে তাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। পরে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের নামও প্রকাশ করেন।
শাহজাহান মিয়ার দেওয়া তথ্য মতে, পুলিশ মো. সুজন ও ছানোয়ার হোসেন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এই দুজনও হত্যাকাণ্ডে জড়িত কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। পরে পুলিশ মামলায় সঞ্জিত ঘোষ নাম আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত শেষে এই ৪ জনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ। অন্য আরও যে ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন সানিয়াত খান বাপ্পা, শফিকুল ইসলাম, আজাদ ফকির ও রুজভেল ইমন। এই ৪জন এখনো পলাতক। গ্রেপ্তার ৪জন বিভিন্ন সময় আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্ত আছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে মামলার বাদী লাভলু মিয়া আদালতে নারাজি আবেদন করেন। পরে আদালতের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটি পুনরায় তদন্তের দায়িত্ব পায়। তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল টাঙ্গাইল সিআইডির পরিদর্শক রফিক উদ্দিন আহম্মেদ আবার অভিযোগপত্র জমা দেন। এ অভিযোগপত্রেও আগের ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারিক কাজ শুরু হয়।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার বাদীসহ ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এখনো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মরদেহের সুরতহাল করা পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে।
মামলার বাদী লাভলু মিয়ার অভিযোগ, একের পর এক তারিখ পড়লেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে আসেননি। এ ছাড়া শুরু থেকে পলাতক ও জামিনে থাকা আসামিরা নানাভাবে বিচার ব্যাহত করার জন্য অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। এ কারণে বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ২৭ নভেম্বর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ না হয়ে পরবর্তী তারিখ দেওয়া হয়েছে ৮ মাস পর। এভাবেই বিলম্বিত হচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়া।
টাঙ্গাইলের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান বলেন, মামলাটির অভিযোগ গ্রহণের পর ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এখন তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ৬ জনের সাক্ষ্য বাকি আছে।
২০ ডিসেম্বর রফিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দাইন্যা ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম ফারুক হত্যার বিচার দাবি করেন।
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, রফিকুল ইসলাম ফারুক একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তিনি তিনবার দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাই ২০১৩ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়। ১১ বছরেও হত্যার বিচার হয়নি, এটা দুঃখজনক। আমরা এই হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই।