সখীপুরে বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া: উত্তেজনা

অপরাধ রাজনীতি সখিপুর সংগঠন

সখীপুর প্রতিনিধি: সখিপুরে দলীয় কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতাকর্মীদের মধ‍্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

সোমবার দুপুরের দিকে সখিপুর উপজেলার মোখতার ফোয়ারা চক্রে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ছাত্রদলের এক নেতা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে সখীপুর থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এ মুহূর্তে পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানিয়েছেন সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন।

পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেলে উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আয়োজনে বর্ধিত সভায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বর্তমান বিএনপিকে আগের আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেছিলেন, আগে আওয়ামী লীগ যেখান থেকে চাঁদা নিত, এখন বিএনপি সেখান থেকে চাঁদা নেয়। এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর ওই রাতেই উপজেলা বিএনপি ও তাদের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র তালতলা চত্বরে এসে জড়ো হন। তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ‘ভারতের দালাল ও শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা’ বলাসহ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁর বক্তব্য মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে গালিগালাজ করার প্রতিবাদে উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সকাল ১০টার দিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সখীপুরের বাসভবনে একটি সভা ডাকেন। সভা শেষে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিতে গামছা বেঁধে মিছিল নিয়ে তালতলা চত্বরের দিকে আসতে থাকেন। এদিকে বেলা ১১টার দিকে উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা তালতলা চত্বরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা ডাকেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মিছিলটি থানা পার হয়ে ডাকঘরের সামনে এসে তালতলা চত্বরের দিকে এগোতে থাকে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাতে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য নাঈম শিকদার (২৫) গুরুতর আহত হন। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন বিকেল চারটার দিকে বলেন, ‘আমাদের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলাম। আমাদের মিছিলের ওপর বিএনপি নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। এতে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু বলেন, ‘আমরা তালতলা চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র অবস্থায় প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলাম। এমন সময় লাঠির মধ্যে গামছা বেঁধে কাদের সিদ্দিকীর নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী না থাকলে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হতো। এরপরও ছাত্রদলের এক কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তাঁর মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টায় বেলা একটার দিকে পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে জানান সখীপুর থানার ওসি জাকির হোসেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বলেন, এ ঘটনায় ছাত্রদলের এক কর্মী আহত হওয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। তবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি।

সখিপুর সার্কেলের এএসপি শরিফুল জানান, বিএনপি নেতার গালিগালাজের প্রতিবাদে র‍্যালির আয়োজন করে উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। খবর পেয়ে শাহজাহান সাজু আহমেদের নেতৃত্বে সখিপুর তালতলা মোড়ে অবস্থান নেয় উপজেলা বিএনপি। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপুর ১২টার দিকে দুই দল মোখতার ফোয়ারা চক্রে মুখোমুখি মিছিল নিয়ে আসে। ফলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *