মির্জাপুরে লালমাটির টিলা কেটে ইটভাটায় বিক্রি

অপরাধ আইন আদালত পরিবেশ মির্জাপুর

মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলায় লালমাটির টিলা কেটে ইটভাটায় বিক্রি কোনভাবেই থামছে না। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির কারণে মাটি ব্যবসায়ীরা এ কাজে দিনের পরিবর্তে রাতের আঁধারকে বেছে নিয়েছে। রাতে ভেকু (এক্সকেভেটর) দিয়ে অবৈধভাবে কাটা হচ্ছে এসব পাহাড়ি জমির লাল মাটি ও টিলা। এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় ও টিলা কর্তন করার বিধান নেই। এ বিষয়ে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের শাস্তি রয়েছে। তবে এসব আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে চলছে লালমাটির টিলা কাটার মহোৎসব।

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তথ্য মতে, মির্জাপুর উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১০৫টি। বর্তমানে ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হয়েছে। ইটভাটা মালিকরা মাটি সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার আজগানা, বাশঁতৈল, গোড়াই, ফতেপুর ও পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে ভেকু মেশিন দিয়ে পাহাড় ও ফসলি জমি কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইটভাটাগুলোয় দেদার পাহাড়ি লাল মাটির সঙ্গে বেলে-দো’আশ মাটি মিশিয়ে ইট তৈরি করে বন বিভাগের শাল-গজারি গাছ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে। নির্বিচারে বনের গজারিসহ সামাজিক বনায়নের গাছ এবং লাল মাটি কেটে নেওয়ায় পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা গজারি গাছ এবং টিলা কাটা বন্ধে বন বিভাগ ও প্রশাসনের জরুরি কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরই এসব মাটিখেকো তাদের অবৈধ মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাটিখেকোদের উৎপীড়নে দিশাহারা হয়ে উঠেছে পাহাড়বাসী, ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা। স্থানীয় এলাকাবাসী আরো জানান, গত কয়েক বছরে শতাধিক টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করলে প্রভাবশালীদের চাপের মুখে পড়তে হয় তাদের। বিভিন্ন স্পটগুলোতে গিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমোদনের বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি।

তরফপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ রেজা জানান, শাল-গজারিগাছ ও পাহাড়ি টিলা কেটে নেওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ঘরবাড়িগুলো ধসের হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ড্রাম ট্রাকে মাটি বহন করায় গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, আইনে আছে কোনোভাবেই পাহাড়ের লালমাটি ও টিলা কাটা যাবে না এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান জানান, পাহাড়ি টিলার লালমাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাত বা দিন যেকোনো সময়ই কেউ পাহাড়ি টিলার লালমাটি কেটে থাকলে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *