মির্জাপুরে চায়না কমলা চাষে দেলোয়ার হোসেনের সাফল্য!

অর্থনীতি কৃষি ফিচার মির্জাপুর

মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে যুবক দেলোয়ার হোসেন দিলু অভাবনীয় এ চায়না কমলার বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ইউরোপ কিংবা কাশ্মীরের ফলের বাগানগুলোর চিত্র হরহামেশা দেখা গেলেও বাংলাদেশে এ দৃশ্য অনেকটা বিরল। তবে দেশের সবুজ জমিন জুড়ে এমন দৃশ্যের চিত্রায়ন করে সফলতা লাভ করেছেন দেলোয়ার হোসেন দিলু।

 

জানা যায়, ২০১৯ সালে নিজস্ব জমিতে দেলোয়ার হোসেন দিলু বেকারত্ব ঘোঁচাতে মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন। ‘দিলু অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামের বাগানটি করোনাকালে বেশ ক্ষতি সাধিত হয়। তাতে দমে যাননি তিনি। হোচট খেয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। স্বীয় কায়িক পরিশ্রম ও অসীম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে তিনি ২০২২ সালে সফলতার মুখ দেখেন। সেই ছোট্ট পরিসর থেকে দিলু অ্যাগ্রো ফার্মের পরিধি এখন সাড়ে ৬ একর। হলুদ রঙের চায়না কমলা চায় দেলোয়ার হোসেন দিলুর ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। সবুজ গাছে থোকা থোকা হলুদ কমলা তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। বছরে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা আয় করছেন। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে তিন বছরে সাড়ে ৯ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন।

এলাকাবাসী ও আশপাশের উপজেলা এমনকি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দিনই লোকজন এসে তার চায়না জাতের কমলার বাগান দেখতে ভিড় করছে। তার বাগান দেখে অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে। জেনে নিচ্ছে চায়না কমলা চাষের খুঁটিনাটি।

সরেজমিনে বাগান দেখতে আসা কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার আব্দুস সামাদ, রিপন মাহমুদ, বলিয়াদী এলাকার সামছুল আলম, ঘাটাইলের ইসমাইল হোসেন, গৃহবধূ আছমা আক্তার রক্সি, দেলদুয়ারের মাসুদ রানা ও তার বন্ধু আশিক মাহমুদসহ অনেকেই জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে দিলু অ্যাগ্রো ফার্মে চায়না কমলা চাষের বিষয়ে তারা জানতে পারেন। স্বচক্ষে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে বাগান দেখতে এসেছেন। বাগানে এসে কমলার ফলন দেখে তারা প্রায় সবাই অবাক হয়েছেন। তারা বাড়ির পাশের পতিত জমিতে চায়না জাতের কমলা চাষে আগ্রহী। দেলোয়ার হোসেন দিলুর পরামর্শ নিচ্ছেন- চাষের ছোটখাট বিষয় ও রোগবালাই সম্পর্কে প্রতিকারে করণীয় জেনে নিচ্ছেন। দিলু অ্যাগ্রো ফার্ম তরুণ-যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের উদাহরণ হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

কমলা চাষী দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, তিনি ছোটখাট একটা ব্যবসা চালাতেন। তাতে লাভের চেয়ে খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় কৃষি ফার্মের দিকে ঝুকেন। প্রথমে বাড়ির আঙিনায় অল্প পরিসরে তিনি বিভিন্ন ফলের বাগান শুরু করেন। করোনাকালে তার বাগান অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে হতাশ না হয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফলের বাগানে আরও মনোযোগ দেন। এক পর্যায়ে ইউটিউবে চায়না কমলা চাষের পদ্ধতি দেখেন। পরে নিজের জমিতে চায়না কমলার চাষ শুরু করেন। তিনি ফলের বাগানের নাম দেন ‘দিলু অ্যাগ্রো ফার্ম’। বর্তমানে তিনি সাড়ে ৬ একর জমিতে ফলের বাগান বর্ধিত করেছেন।

সফল এ কৃষি উদ্যোক্তা জানান, তিনি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অল্প পরিসরে চায়না কমলা গাছের চারা রোপণ করেন। শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও পরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যা করায় ২০২২ সালে প্রথম গাছে চায়না কমলা ধরতে শুরু হয়। ওই সময় তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন। বর্তমানে চায়না কমলা আবাদ থেকে তিনি বছরে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা আয় করতে পারছেন।

তিনি আরও জানান, তার বাগান পরিচর্যায় প্রতিনিয়ত চারজন শ্রমিক কাজ করছেন। তাদেরকে দৈনিক মজুরী হিসেবে জনপ্রতি ৪৫০ টাকা দিতে হয়। এতে ফল বাগানের মাধ্যমে কিছু লোকের বেকারত্ব দূর হচ্ছে। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই তার চায়না কমলার বাগান দেখতে আসছেন- পরামর্শ নিচ্ছেন, চায়না কমলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তার বাগানের চায়না জাতের কমলা খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টিতে ভরপুর। এ বছর ফলনও খুব ভালো হয়েছে। ১৪০টি কমলা গাছ থেকে প্রতিদিন ৩০-৪০ কেজি কমলা তুলতে পারছেন। প্রতি কেজি কমলা পাইকারী ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা খাতুন জানান, দেলোয়ার হোসেন দিলুর বাগানে ১৪০টি চায়না কমলা গাছ রয়েছে। কমলা বাগানটি করার ক্ষেত্রে তার অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শগত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ওখানে যিনি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন তিনি চাষী দেলোয়ারকে সবসময় সহযোগিতা করছেন। আরও যদি কেউ কমলাসহ অন্যান্য ফল বাগান করতে আগ্রহী হন তাদেরকেও কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *