সখীপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে মা রওশন আরা বেগম (৫৫) হত্যার অভিযোগে বাবার ফাঁসি চেয়ে মানববন্ধন করেছে ছেলে রনি মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উপজেলা বড়চওনা-শ্রীপুর সড়কের কাঁকড়াজান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। স্থানীয় এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ অংশ নেন। ওই মানববন্ধনে এলাকাবাসী ছাড়াও নিহতের স্বজন এবং দুইপুত্র রনি আহমেদ ও রুবেল হোসেন বক্তব্য দেন।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ভোররাতে উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে দুই সন্তানের জননী রওশন আরা বেগমের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়। নিহত রওশন আরা বেগম ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। মৃত্যুরও তিনদিন আগে বিষপান করেছে বলে প্রচার করেন স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে, মায়ের বিষপানের খবর শুনে প্রবাসে থাকা জ্যেষ্ঠপুত্র রনি দেশে আসেন। ঘটনার পর থেকেই জাহাঙ্গীর আলম পালিয়ে গেছে।
নিহতের দুইপুত্র রনি আহমেদ ও রুবেল হোসেন বলেন, বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনাটি রহস্যজনক, মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেন, বিভিন্ন সময় মাকে বাবা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো, প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপরও চড়াও হতো বাবা।
দুই সন্তানই অভিযোগ করে বলেন, বাবা পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। এর প্রতিবাদ করতো বলে মাকে বাবা ব্যাপক মারপিট করে সজ্ঞাহীন করে ফেলে রাখতো।
জ্রেষ্ঠপুত্র রনি আহমেদ (২৮) বলেন, ৮ বছর ধরে প্রবাসে থাকা অবস্থায় বাবাকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। সে টাকার হিসাব দেন না। নানা অপকর্মে জড়িত ছিল বাবা। এখন আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এ অবস্থায় বিদেশ চলে গেলে স্ত্রী সন্তান, ছোট ভাই হুমকির মুখে থাকবে; তাই দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করছি।
এছাড়াও বাবা আরও দুটি বিয়ে করেছে জানিয়ে বলেন, এ নিয়ে পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করেছিল। মায়ের হত্যার বিচারে বাবার দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করেন। প্রতিবেশীরাও একই মন্তব্য করেছেন।
নিহত রৌশনারার ননদ স্বরবানু বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে স্থানীয় এক নারীর সাথে জাহাঙ্গীর অপকর্ম করে ধরা পড়লে গ্রাম সালিসে তাকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই ঘটনার পর সে আরেক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। গুঞ্জন আছে জাহাঙ্গীর ওই নারীকে বিয়েও করেছে। নিয়মিত ওই নারীকে টাকা-পয়সাও দিত। স্বামীর এমন অপকর্মের প্রতিবাদ করলে জাহাঙ্গীর রৌশনারাকে মারধর করত। এবার তো মেরেই ফেললো। আমরা এই হত্যার বিচার চাই’।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন মেজবাহ বলেন, মাঝে মধ্যে ওই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো।
মানববন্ধন শেষে সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত উপস্থিত হন। তিনি জানান, এই ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, মামলা হয়েছে আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা পলাতক আছেন বলে মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।