শিশির আর ঠাণ্ডা হাওয়া নিয়ে এলো হেমন্তকাল!

উৎসব টাঙ্গাইল সদর পরিবেশ ফিচার বিনোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে ঘাসের ডগায় ও ধানের শীষে জমতে শুরু করেছে মুক্ত বিন্দুর মতো শিশির। বাতাসে ঠাণ্ডাভাব অনুভূত হচ্ছে। শেষ বিকেল আর ভোরের প্রকৃতি কুয়াশার আবছা চাদরে ঢেকে যেতে শুরু করেছে। আজ পহেলা কার্তিক। আবহমান বাংলায় ষড় ঋতুর পরিক্রমায় প্রকৃতিতে এসেছে হেমন্তকাল।

 

শরত্কালের পর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মিলে হেমন্ত। নতুন ঋতুর আগমনে রূপ বদলায় প্রকৃতি। হেমন্তকে বলা হয় শীতের বাহন। প্রকৃতিতে অনুভূত হচ্ছে ঈষৎ শীতার্ত আমেজ। দিনে তাতানো রোদ্দুর থাকলেও শেষ রাতে কুয়াশা ঘিরে রাখছে উত্তরের অনেক জনপদ। গ্রামীণ জনপদে এখন হিম হিম অনুভব হচ্ছে। খণ্ড খণ্ড মেঘ সরে গিয়ে উদোম হয়েছে বিশাল নীল আকাশ। আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। কারণ এই হেমন্তে বাড়ির উঠোন ভরে উঠবে নতুন ধানের ম-ম গন্ধে। বাঙালির প্রধান অন্ন, আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময় হেমন্তের শেষ ভাগে।

আশ্চর্য ঋতু হেমন্তে প্রকৃতির বিচিত্র রূপের বর্ণনা আর স্তুতিতে মগ্ন হয়েছেন বাঙালি কবি-সাহিত্যিকেরা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়- ‘হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-/ হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধুমল রঙে আঁকা।/ সন্ধ্যাপ্রদীপ তোমার হাতে মলিন হেরি কুয়াশাতে,/ কণ্ঠে তোমার বাণী যেন করুণ বাষ্পে মাখা।/ ধরার আঁচল ভরে দিলে প্রচুর সোনার ধানে।/ দিগঙ্গনার অঙ্গন আজ পূর্ণ তোমার দানে…।

হেমন্তকালকে সবচেয়ে চেনা যায় ভোরের শিশির বিন্দুতে। খুব ভোরে একটি শীতল বাতাস, সবুজ পাতার গায়ে জমে থাকা শিশিরবিন্দু এক অপার্থিব দৃশ্যমালা রচনা করে। এ সময়ে পাল্টে যায় প্রকৃতি ও মানুষ। গ্রামের পরিবেশে আনন্দ বিরাজ করে। গ্রাম্য মেলা, ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস বানানোর আয়োজন, ঢেঁকির শব্দ সব মিলিয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতিকে বরণ করে নেয় হেমন্তে। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল। সকালের শিশির ভেজা ঘাস আর হালকা কুয়াশায় প্রস্তুত হয় প্রকৃতি, খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুত হতে দেখা যায় গাছিদেরও, তোলা শুরু হয় নতুন আলু। প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়, ‘লিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি/ নিস্তব্ধ ছিলাম ব’সে;/ শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/ নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/ উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো…।’

সাধারণত বর্ষা আর শরতের বৃষ্টির জলধারা হেমন্তে শুকাতে থাকে। হেমন্তের বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। বাড়ির আঙিনা নতুন ধানে ভরে ওঠে। কৃষক বধূ ধান শুকোতে ব্যস্ত থাকেন। প্রতি ঘর থেকে আসে ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ। তবে দিনে দিনে বদলাচ্ছে সেই হিসাব-নিকাশ।

পুনর্জন্মে বিশ্বাসী প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের কণ্ঠে পুনর্বার ফিরে আসার আকুতি ধ্বনিত হয়েছে, ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে;/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে’।

আবহাওয়াবিদদের মতে, এখন থেকে যত দিন যাবে ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে তত শীত আসতে থাকবে। উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে শুষ্ক হয়ে আসবে শরীর। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এখন প্রকৃতি যেন আর নিয়ম মানছে না। হেমন্ত ঋতুতে চলে শীত আর গরমের খেলা। হেমন্তকালের শুরুর দিকে এক অনুভূতি আর শেষদিকে অন্য অনুভূতি। কেমন খামখেয়ালি হয়ে উঠেছে প্রকৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *