টাঙ্গাইলে দেবীকে সাজাতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা

ইতিহাস ও ঐতিহ্য টাঙ্গাইল সদর বিনোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের প্রতিমা শিল্পীরা রঙের আঁচড় আর সাজসজ্জায় দুর্গা দেবীকে সাজাতে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নরম কাদা-মাটি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিল তিল করে গড়ে তোলা দশভূজা দেবী দুর্গার প্রতিমায় ভরে উঠেছে প্রতিটি মণ্ডপ। শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি করেন দেবী দুর্গাকে। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর দিগন্তজুড়ে কাশফুল জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। দেবী দুর্গা রূপ নিয়েছে নিজ অবয়বে। নানা রং আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবীর প্রতিচ্ছবি। তাই ঘুম নেই প্রতিমা শিল্পীদের।

 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা। বুধবার (৯ অক্টোবর) থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছর টাঙ্গাইলে ১১০৪টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আর এই উৎসবকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মন্ডপ তৈরি থেকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের শিল্পীরা।

টাঙ্গাইল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে, এ বছর টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় এক হাজার ১০৪টি পূজা মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলার সদর উপজেলার পূজা মন্ডপে ২০১টি, বাসাইলে ৫১টি, সখিপুরে ২৮টি, মির্জাপুরে ২০৭টি, নাগরপুরে ১২৫টি, দেলদুয়ারে ১১৩টি, গোপালপুরে ৪৫টি, ভূঞাপুরে ৩২টি, কালিহাতীতে ১৫৬টি, ঘাটাইলে ৬২টি, মধুপুরে ৫২টি ও ধনবাড়ীতে ৩২টি পূজা মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ১৩০৪টি পূজা মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের চেয়ে ২শ’টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে।

জেলার তারুটিয়া প্রতিমা তৈরির কারখানাসহ বিভিন্ন মন্ডপে ঘুরে দেখা গেছে, তারুটিয়া কারখানায় শিল্পীরা প্রতিমা তৈরির শেষ মুর্হুতের কাজ করছেন। কেউ দেবীর গায়ে দিচ্ছেন তুলির আঁচড়। তারুটিয়া এলাকার প্রতিমা তৈরির কারিগর বসন্ত পাল বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। এবার আমি ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। বর্তমানে খড়, বাঁশ, মাটি, লোহাসহ সব কিছুর দাম আগের তুলানায় অনেক বেশি। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে আমাদের এখন পোষে না। জাতিগত কাজ এজন্য করতে হয়। কারিগর সন্ধ্যা রানী পাল বলেন, আমি পরিবারের কাজকর্ম করে যে সময়টুকু থাকে আমার স্বামীর সাথে প্রতিমা তৈরি কাজে সাহায্য করেছি। দুলাল পাল বলেন, এ বছর ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছি। আমরা দিনরাত জেগে কাজ করছি। কাজ করতে গিয়ে আমাদের অন্য কোনো দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ নেই। খাওয়া দাওয়ারও কোনো ঠিক নাই।

প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি প্রতিমা তৈরি করতে শিল্পীদের সর্বনিন্ম ২৫-৩০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ তিন-চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এ বছর। প্রতিমা তৈরির জন্য তাদের ৩ থেকে ৪ ভ্যান মাটি লাগে। খড়ের আউর লাগে ৫ থেকে ৬ পৌন। এছাড়াও কাঠ, বাঁশ, দড়ি, পেরেক, সুতা ও ধানের গুড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রতি ভ্যান মাটিতে তাদের খরচ হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রতি পৌন আউরে খরচ হয় পাঁচশ’ টাকা থেকে ছয়শ’ টাকা। আর বাকি জিনিসগুলোর জন্য খরচ হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মতো। আগের থেকে সব কিছুর জিনিসপত্রের দাম বেশি।

টাঙ্গাইল পূর্ব আদালত পাড়ার বড় কালিবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, শিল্পী নিশি কান্ত পাল প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একটি প্রতিমা তৈরি করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিমা তৈরিতে চার থেকে পাঁচজন শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেন। একেকজন শিল্পী প্রতিমার এক এক কাজে হাত দেন বলেও জানান প্রতিমা শিল্পীরা।

টাঙ্গাইল পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন ঝন্টু জানান, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১১০৪টি পূজা মন্ডপে পূজা হবে। এজন্য মন্দিরে বিভিন্ন কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। পুজার আয়োজকরা জানান, পুজার নিরাপত্তা নিয়ে তারা সংকিত নন। অন্য ধর্মের লোকজন তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুগোর্ৎসব উদযাপিত হবে বলে তারা আশাবাদী।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, পূজা উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। পুলিশ সুপারের অফিসে কন্ট্রোল রুম করতে যাচ্ছি। ১২৫ জনের মতো স্ট্রাইকিং পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। মোটরসাইকেলে প্রায় ৪৬৩ জন বিভিন্ন ডিউটিতে থাকবে। পুলিশের ২৮টি পিকআপ গাড়িতে ১১২ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পুলিশের একটি টিম সাদা পোশাকে নজরদারি করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করবো। ডোনের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা জায়গায় ছোট ছোট কন্ট্রোল রুম থাকবে। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা আশা করি জেলায় শান্তিপূর্ণ ও সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করতে পারবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *