টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় দুর্বিসহ জনজীবন

টাঙ্গাইল সদর দুর্ঘটনা দুর্নীতি পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের অতিবৃষ্টিতে পৌর এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে প্রবেশ করেছে বৃষ্টির পানি। এতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ পাড়া মহল্লার রাস্তাঘাট। ভোগান্তি পোহাচ্ছে হচ্ছে পৌরসভার অধিকাংশ পৌরবাসীকে। পানি নিষ্কাশনের জন্য সাবেক টাঙ্গাইল পৌরসভা কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি মিললেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

 

জানা যায়, ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই টাঙ্গাইল পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৯৮৫ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভা ‘গ’ থেকে ‘খ’ এবং ১৯৮৯ সালে ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নতি লাভ করে। তারপরও দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরেও দুর্ভোগ কমেনি পৌরবাসীর।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়া, বিশ্বাস বেতকা, পূর্ব আদালতপাড়া, থানা পাড়া, আদি টাঙ্গাইলসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের বাসা বাড়িতে পানি জমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করায় মালামাল ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন অনেকেই।

স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার মোট ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরসভার ১৪, ১৫, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের।

১৮ নং ওর্য়াডের বাসিন্দা স্বপন কুমার রায় জানান, পৌর কর্তৃপক্ষ গত ৫ বছরে আমাদের এলাকায় কোন প্রকার উন্নয়ন কাজ করেননি। শহরের সব খাল দখল হয়ে গেছে, পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ছোট-খাট যে ড্রেন রয়েছে তা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে না।

শহরের সাবালিয়া এলাকার স্কুল ছাত্র মেরাজ উদ্দিন বলেন, অল্প বৃষ্টিতে পাকা সড়ক তলিয়ে আমার বাসায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। নাসিমা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, আমাদের এলাকার খালটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে একেবারেই বন্ধ হয়ে আছে। এতে একটু বৃষ্টি হলেই বাসায় পানিবন্দি হই। রান্না বন্ধ হয়ে যাওয়া গতকাল সারাদিনে একবার খেয়েছি। খাল অবৈধ দখল মুক্তের পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরও ভাল করার দাবি জানাচ্ছি।

১৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব আদালত পাড়া এলাকার শেফালী খাতুন জানান, তাদের বসতঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। তাই বাসার ফ্রিজসহ অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘর থেকে উঠোনে নামলেই হাঁটুপানি।

১৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল করিম জানান, গত কয়েক বছর শুধু উন্নয়নের কথা শুনেছি। কিন্তু সাবেক মেয়ররা নানা অবকাঠামো উন্নয়ন করলেও কোন প্রকার ড্রেনের উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। ফলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারনে আমাদেরকে এ ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।

রিকশাচালক সেকান্দার আলী বলেন, বৃষ্টি হওয়ার পর টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে ও সাবালিয়া এলাকায় যাওয়া যায় না। অল্প বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে থাকে। রিকশার মোটরে পানি প্রবেশ করে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, ড্রেনের অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অবৈধভাবে খাল দখল ও শহরের পুকুর ভরাটের কারণে এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শহরের ২৭টি খালের মধ্যে প্রায় সব খাল অবৈধভাবে দখল হয়ে রয়েছে। এছাড়াও শহরের পুকুরগুলো প্রভাব খাটিয়ে ভরাট করা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ লাঘবে খাল দখল মুক্তের পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করা জরুরি। তাহলেই টাঙ্গাইল শহরবাসীর দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক মো. শিহাব রায়হান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *