নিজস্ব প্রতিবেদক: কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নগরবাড়ি আফাজ উদ্দিন কৃষি প্রশিক্ষনায়তন ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদর্শন তালুকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অর্থ আত্মসাত, নিয়োগ বাণিজ্য, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, অযোগ্যতা ও অদক্ষতার কারণে কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় তাকে অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন নন এমপিও শিক্ষকের কয়েক মাসের বেতন বন্ধ থাকলে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নিত প্রার্থীর নির্বাচনে কলেজের তহবিল থেকে ব্যয় করা ৪০ হাজার টাকা যায় আয় ব্যায়ের হিসেবে দেখানো হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, সুদর্শন তালুকদার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কলেজে ব্যাপক দুর্নীতিসহ আর্থিক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করেছেন। শিক্ষক, কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া সুদর্শন তালুকদার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ আবু হাশেমকে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর শিক্ষক কর্মচারীর যৌথসভায় প্রকাশ্যে স্বীকার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন বাবদ ৪৪ লাখ ১৫ হাজার ৬৪০ টাকা আয় হয়েছে। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদর্শন তালুকদার ব্যাংকে জমা দিয়েছেন মাত্র এক লাখ তিন হাজার টাকা। বাকি টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করেছে ভূঞা বিল ভাউচার তৈরি করেছেন।
এছাড়া, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসান নম্বরে এফডিআরের ৪ লাখ ২২ হাজার ৩০০ টাকা জমা দিলেও আয়-ব্যয় হিসাবে গোপন করা হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের (২০২০-২১) অর্থ বছরের দুই দফায় কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কোন কাজ করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের পুরাতন চেয়ার-টেবিল রঙ করে তাতে জেলা পরিষদ, টাঙ্গাইল লিখে বিল ভাউচার করে উক্ত টাকা আত্মসাত করেন। অপরদিকে ২০১৭ সালে প্রতিবেদনে আয় দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭০ টাকা আর প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৭০ টাকা। অথচ পরে খরচ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭০ টাকা।
এদিকে অত্র প্রতিষ্ঠানে লাইলি নামের এক নারীকে আয়া পদে স্থায়ী নিয়োগের জন্য ৭০ হাজার টাকা এবং ল্যাব সহকারী পদে ফরিদ নামের একজনের কাছ থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ঘুষ নেওয়ার পরও তিনি তাদের কাউকেই স্থায়ী নিয়োগ দিতে না পারায় চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগিরা।
উন্নয়নের কথা বলে নানাভাবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে অভিযোগ পত্রে। কমিটির অনুমোদন ছাড়া ধার করে প্রতিষ্ঠান চালানোর নিয়ম না থাকলেও সম্পূর্ণ ক্ষমতার দাপটে নিজের ইচ্ছায় যার তার কাছ থেকে ধার এনে প্রতিষ্ঠানে খরচ করেছেন বলে তিনি প্রচার করেন। পরবর্তীতে কলেজের আয় থেকে সেই ধারের টাকা একাই শোধ করেন। অধ্যক্ষ নিজেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা আয়-ব্যয়ের খাতায় না তুলে বিভিন্ন ভাউচার দেখিয়ে খরচ করেন।
প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে দ্রুত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদর্শন তালুকদারকে অপসারণ ও বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সিনিয়র প্রশিক্ষক মোঃ শাহাদৎ হোসেন মিয়া।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুদর্শন তালুকদার তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে জোর করে কতিপয় শিক্ষক এ সকল মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, যা সঠিক নয়।