নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে বেসরকারি সংস্থা ‘সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট থ্রু ইউনিটি-সেতু’র এক কর্মীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ওই সংস্থাটির পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজন হলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মির্জা সাহাদত হোসেনের ছেলে ও সংস্থাটির উপপরিচালক (মানবসম্পদ) মির্জা সাকিব হোসেন, উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. শরিফুল ইসলাম, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক খায়রুল হাসান ও সহায়ককর্মী রাশেদুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে এনজিওর কয়েকজন কর্মকর্তা থানায় এসে জানান, টাঙ্গাইল শহরের মেইন রোড এলাকায় সেতু’র অফিস ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে তাদের এক কর্মচারী আত্মহত্যা করেছেন। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে শুক্রবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল শহরের সদর সড়কে বেসরকারি সংস্থা সেতু’র প্রধান কার্যালয়ের পাশ থেকে হাসান আলী (২৩) নামে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার পুঠিয়া গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে। হাসান ওই এনজিওর জামালপুর সদরের পিয়ারপুর শাখার সহকারী হিসাবরক্ষক ছিলেন।
হাসানের মা সুফিয়া খাতুন বাদী হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় এনজিও মালিকের ছেলে মির্জা সাকিবসহ সংস্থাটির পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর এনজিও কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে হাসানকে জামালপুর থেকে টাঙ্গাইলে এনজিওর প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এর দুদিন পর ১৮ সেপ্টেম্বর এনজিও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি হাসানের পরিবারকে জানায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এনজিও অফিসে এলে তাদের সামনেই হাসানকে গালিগালাজ করেন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
হাসানের পরিবারের সদস্যরা সংস্থাটির কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে যে তারা দুদিনের মধ্যে টাকা জোগাড় করে অফিসকে বুঝিয়ে দেবে এবং সিরাজগঞ্জে ফিরে আসে। এনজিও কর্তৃপক্ষ গতকাল পরিবারের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করে এবং জানায় যে হাসান অসুস্থ। আজ টাঙ্গাইল হাসপাতালে তার মরদেহ পায় পরিবারের সদস্যরা।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, সংস্থাটির পিয়ারপুর শাখার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক ও সহকারী হিসাবরক্ষক তিনজন যোগসাজশ করে প্রায় ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ১৬ সেপ্টেম্বর তিনজনকে প্রধান কার্যালয়, টাঙ্গাইলে আনা হয়। অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দেওয়া হলেও ব্যবস্থাপক ও হিসাবরক্ষক হাসান আলীকে সপ্তম তলার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর হাসানের মা-বাবাকে কার্যালয়ে ডেকে এনে বিষয়টি জানানো হয়।
নিহত হাসানের বাবা আবদুল লতিফ বলেন, আমার ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করছে। আমাকে শুক্রবার রাতে সেতু অফিস থেকে ফোন করে বলা হয়, আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আপনি আসেন। পরে থানা থেকে ফোন করে হাসানের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
সেতুর উপ-পরিচালক (প্রশাসন) বিমল চক্রবর্তী বলেন, পিয়ারপুর শাখার ম্যানেজার ও সহকারী হিসাবরক্ষককে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শাখায় সংযুক্ত করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। অফিসের সাততলায় তাঁদের থাকার জন্য একটি রুম দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাফ দিয়ে হাসান গতকাল রাতে আত্মহত্যা করেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, হাসানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করি এবং কয়েকদিন ধরে তাকে অফিসে আটকে রাখার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ায় এনজিওটির মালিকের ছেলেসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতেই থানায় নিয়ে আসি।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় মৃত হাসানের মা বাদী হয়ে আজ হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হাসানের মাথায় আঘাতের চিহ্ন আছে। ময়নাতদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।