আন্দোলনে নিখোঁজ শাহাদত: জীবিত বা মৃত ছেলের সন্ধান চান মা

কালিহাতী দুর্ঘটনা রাজনীতি

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার আলীপুর গ্রামের আব্দুল হালিম ও আসমা খাতুন দম্পতির বড় ছেলে শাহাদত হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব গোলচত্বর এলাকায় যোগ দেয় সে। ৪ আগস্ট সরকার পতনের আন্দোলনে ঢাকার শাহবাগে যোগ দিয়ে নিখোঁজ হন শাহাদত। এরপর তার সঙ্গীরা ঘরে ফিরলেও শাহাদতের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে একমাত্র উপার্জনকারী ছেলে নিখোঁজ থাকায় দিশেহারা তার পুরো পরিবার।

 

নিখোঁজ শাহাদত হোসেনের মা আসমা খাতুন বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয় ৪ আগস্ট বিকালে। আমাকে বলেছিল, সে আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে। চারপাশে গোলাগুলি হচ্ছে। অবস্থা খারাপ। মনে হয় ফিরতে পারব না। ফোনের ওপাশে অনেক গোলাগুলির শব্দ শুনি। তখন ফোন কেটে দেয়। এর পর থেকে তার আর খোঁজ পাইনি। জীবিত হোক বা মৃত, আমার ছেলের খোঁজ চাই। আমার ছেলেকে এক নজর দেখতে চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, মা আসমা খাতুন ছেলের শোকে পাগলপ্রায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ছেলের সন্ধান না পেয়ে হতাশ তার পরিবার। জীবিত বা মৃত এক নজর দেখার অপেক্ষায় শাহাদতের স্ত্রী জিয়াসমিন। পাঁচ মাস বয়সি তাদের একমাত্র কন্যা শিশুর ভরণপোষণ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। শাহাদত পেশায় ছিলেন ভেকুচালক। গাড়ি চালিয়ে যা উপার্জন হতো তাতে সংসার চলত।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহাদত গত ৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। পরে ওইদিনই রাতে আন্দোলনে যোগ দিতে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার শাহবাগ এলাকায় যায় শাহাদত। ৪ আগস্ট সকালে স্ত্রীকে জানায়, দ্রুতই বাড়ি ফিরবেন। বিকালে মাকে অন্য একটি নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে জানায় শাহবাগ এলাকার পরিস্থিতি খারাপ। এরপর থেকে নিখোঁজ শাহাদাত। ঘটনার পর শাহাদতের বাবা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল মর্গে ছেলের লাশ খুঁজেও পাননি।

শাহাদতের স্ত্রী জিয়াসমিন বলেন, কাজে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এরপর শুনি ঢাকায় গেছে আন্দোলনে যোগ দিতে। সে আর ফেরেনি। মানুষটা কি বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে, সেটাওতো জানি না। আমার পাঁচ মাস বয়সি মেয়েটার ভবিষ্যৎ কী, কে দেখবে আমাদের। মেয়েটা বড় হয়ে কাকে বাবা ডাকবে।

শাহাদতের বাবা আব্দুল হালিম বলেন, ঢাকার অনেক হাসপাতালে খুঁজেছি। কত লাশ মর্গে পড়েছিল অথচ ছেলের লাশ পাইনি। আমার ছেলের সন্ধান চাই। আগস্টের ১৫ তারিখ ডায়েরি করেছি থানায়। সরকারের কাছে দাবি আমার ছেলের সন্ধান চাই।

কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূইঁয়া বলেন, শাহাদতের পরিবার সাধারণ ডায়েরি করেছে। সবদিকে বার্তা দেওয়া আছে। এখনও কোনো তথ্য পাইনি।

কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদত হুসেইন বলেন, শাহাদত হোসেনের পরিবারকে ডেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। শাহাদতকে খুঁজে পেতে আমাদের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *