এক ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করেছি অন্য ফ্যাসিস্টকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য নয়- সমন্বয়ক সারজিস আলম

টাঙ্গাইল সদর ফিচার রাজনীতি শিক্ষা সংগঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, আমাদের আজকে এই টাঙ্গাইলে এসে শুনতে হয় আমার যে ভাই মারুফ হত্যা হয়েছে। আমার যে বোনকে অপদস্ত করা হয়েছে, আমার যে ভাইকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, আমার স্কুল-কলেজের ছোট ভাই-বোনদেরকে বিভিন্নভাবে হামলা ও রক্তাক্ত করা হয়েছে। সেই পুলিশটা নাকি এখনো আশেপাশে ঘুরাফেরা করে। আমার ভাই যখন রক্তাক্ত হয়ে হাসপাতালে। তখন সেই হামলাকারী কতিপয় পুলিশ কিভাবে উন্মুক্ত রাস্তায় ঘোরাফেরা করে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই ওই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর, চাটুকার তেলবাজ, তোষামদকারী যে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য রয়েছে। তারা যদি এখনো নিজেকে শুধরে না নেয়। তাদের ওই নেত্রী হাসিনার মতোই তাদেরকে দেশত্যাগ করতে হবে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশকে আমাদের রায় হিসেবে জানিয়ে দিতে চাই। এক ফ্যাসিস্টকে আমরা দেশছাড়া করেছি, অন্য ফ্যাসিস্টকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য নয়। কেউ যদি এখনো শয়নে স্বপনে স্মৃতিতে কিংবা ঘুমের মধ্যে চিন্তা করে আবারও ছাত্র জনতাকে ডোমিনেট করে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠবে। তারা যেন ওই শেখ হাসিনাকে দেখে শিক্ষা নিয়ে নেয়।

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে সমন্বয়ক সারজিস আলম আরও বলেন, আমরা চাই আগামীতে যে বাংলাদেশ হবে, সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব আপনারা দিবেন। আরো চাই ওই সংসদে গিয়ে আপনি একজন এমপি ও মন্ত্রী হবেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। আপনাকে ওই সংসদে একজন পলিসি মেকার হিসেবে যেতে হবে। কারণ দিন শেষে আপনি কি খান, কি করেন, কি পড়েন, কিভাবে চলবেন, আপনার আইন কি, আপনার নিয়ম নীতি কি হবে, আপনার চলাফেরা কিভাবে হবে। তার সব ডিসিশন পলিসি মেকিং হয় ওই সংসদ থেকে। তাহলে টাঙ্গাইলের এই মেধাবী তরুণ প্রজন্ম যদি ওই সংসদে প্রতিনিধিত্ব না করে তাহলে কারা করবে? সেই জায়গায় আজকের পর থেকে আপনাদের বাবা-মাকে বলে দিবেন আপনারা যেমন এতদিন স্বপ্ন দেখেছেন আপনার ছেলে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, ম্যাজিস্ট্রেট হবে। আজকের পর থেকে আপনারা স্বপ্ন দেখবেন আপনার ছেলে দেশের অন্যতম সেরা একজন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠবে। একটা জিনিস মনে রাখবেন রাজনীতিবিদ হতে হবে পলিসি মেকিং এর জন্য। অথবা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। যদি আপনি এটা না হন ওই দুইটার কোন একটি জায়গায় আপনাকে দেখা না যায়। তাহলে আপনার চেয়ে তুলনামূলক অযোগ্য মানুষদের দ্বারা আপনাদেরকে শাসিত এবং শোষিত হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদেরকে স্পষ্ট করে বলি, আপনারা রাজনীতিতে আসবেন। কিন্তু তার পূর্বে যোগ্য রাজনীতিবিদ হয়ে ওই সংসদে আসবেন। যেন কেউ আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, ভাষা থেকে শুরু করে কোন কিছু নিয়ে একটি কথা না কখনো বলতে পারে। এই বাংলাদেশ আর ফ্যাসিজম চায় না। এই বাংলাদেশ ওই পলিটিক্যাল কালচার চায় না। এই বাংলাদেশের ছাত্র জনতা এখন একটি নিউ পলিটিকাল সেটেলমেন্ট চায়। যারা কথা বলবে ছাত্রদের জন্য, যারা কথা বলবে সমতা, সমবন্টন ও সব মর্যাদার জন্য। টাঙ্গাইলের এই ছাত্র জনতা ২৪শে অভ্যুত্থানের যে স্পীড, সেই স্পীড টাঙ্গাইল থেকে ছড়িয়ে পড়ুক পুরো বাংলাদেশে।

তিনি আরও বলেন, তরুণ সমাজ ছাত্র জনতা এক সাথে যখন রক্তের বন্যা বইয়ে নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে সকল অন্যায়কে ভাসিয়ে দিতে প্রস্তুত। ঠিক তখনই আজকের এই মঞ্চে বসে চোখের সামনে সবার প্রথম যে ব্যানারটি চোখে পড়েছে সেটি হচ্ছে উপজেলা ভূমি অফিস টাঙ্গাইল সদর টাঙ্গাইল। আপনারা বলুন তো এই উপজেলা ভূমি অফিসে সকল কাজ ন্যাযতার ভিত্তিতে টাকা ছাড়া হয়? তাহলে টাকা দিয়ে আমার ন্যায্য অধিকার এই ভূমি অফিস থেকে আদায় করে নেয়ার জন্য আমরা কি অভ্যূত্থান ঘটিয়েছি? তাহলে আজকে থেকে শুধু এই ভূমি অফিস নয়, আপনাদের এই টাঙ্গাইলের যে কোন অন্যায় আপনার অবশ্যই আপনাদের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সেই প্রতিবাদটি জানাবেন কিনা?

আমরা জানতে পেরেছি আপনাদের মেডিকেল কলেজ, এই মেডিকেল কলেজের নাম ছিল টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ, ঠিক কিনা। তাহলে এই সেই ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল যখন বাংলাদেশে মাত্র ১৯টি জেলা ছিল, তার মধ্যে একটি বৃহত্তর জেলা ছিল এই টাঙ্গাইল। সেই টাঙ্গাইলের গৌরব কে ছোট করে যখন কোন খুনির নামে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ সেটি কি আমাদের স্পিডের সাথে যায়? তাহলে আজকের পর থেকে ছাত্র জনতা দাবি হচ্ছে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ তার নামে স্বমহিমায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হয়ে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্বের জায়গা করে নিবে। আমরা তাদেরকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, এই মেডিকেল কলেজে আপনাকে যদি অপারেশনের জন্য একটি টিকিটের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর অবস্থায় পড়তে হয়। কিন্তু দালাল ধরা ছাড়া আপনাদের একটি কাজও কি ঠিক মত হয় এখানে? তাহলে এই দালালের স্পিড নিয়ে কি আমরা এই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছি। ওই আয়া থেকে স্টাফ সকলকে একটি বেডের জন্য আমাদের টাকা দিতে হয়। এই টাকা দেয়ার জন্য আমরা কি এই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছি? আমরা ছাত্র জনতা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই এসব দালালি টাকা দিয়ে কাজ করার জন্য আর জনতার ঔষুধ আপনাদের কোম্পানির কাছে বিক্রি করার জন্য ছাত্র জনতা এই অভ্যুত্থান ঘটায়নি।

আমরা আপনাদেরকে স্পষ্ট জিনিস বলে দিতে চাই। শুধু এই টাঙ্গাইলে নয় পুরো বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সব থেকে যে বড় ক্ষতিটি করেছে সেটি হচ্ছে- তিনি তার আওয়ামী লীগকে শুধু ফ্যাসিস্ট বানাইনি। সে তার বাংলাদেশকে শুধু ফ্যাসিস্ট বানাইনি। সে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছে আমাদের প্রত্যেকটি মানুষকে। এই জায়গা থেকে আমরা যদি নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে চাই। তাহলে আমাদের যে সংশোধন সেই সংশোধন শুরু করতে হলে এই ব্যক্তিগত পর্যায়ে থেকে। আপনারা বলুন তো আপনার এই টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজি হয় কিনা? অটোস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড, ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির নামে সিন্ডিকেট আছে কিনা? তাহলে এই যে আমাদের স্পিড। সেই স্পিডকে যদি আমরা ধরে রাখতে চাই তাহলে ঐসব চাঁদাবাজ এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আপনার যে ভয়েস সেই ভয়েসটি আবার তুলে ধরতে হবে।

একটি জিনিস মনে রাখবেন, এটি কখনো মনে করার উপায় নেই যে ১০০ জন মানুষ চাঁদাবাজি করছে, করুক। মনে রাখবেন এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। কেউ যদি একবার স্কোপ পায়, এটি ধীরে ধীরে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে চাঁদাবাজি করা হয় এ কারণেই আপনার কাছে অটো, বাস ভাড়া এবং সবজি ও বিভিন্ন পণ্যেও দাম বেশি রাখা হয়। ঠিক এ কারণে এই ছাত্র-জনতা আজকের পর থেকে সকল চাঁদাবাজি এবং সকল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলবে।

আমরা শুনতে পেরেছি আপনাদের এই জায়গায় একটা বিশাল বিশেষণ যুক্ত নাম রয়েছে সেই নামটি হচ্ছে রনি। আপনারা নাকি তাকে বলেন কোয়ার্টার রনি। এসব রনিরা এরপর থেকে যেন টাঙ্গাইলের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কোন জায়গায় তাদের অস্তিত্ব প্রদর্শন না করতে পারে। রনিসহ এমন সন্ত্রাসী এবং তাদের যত দোসর রয়েছে। সকল দোসরকে এই ছাত্র জনতা আইনের হাতে তুলে দিয়ে সারাজীবনের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের যে জায়গা কেরানীগঞ্জ জেলখানা সেখানে পাঠিয়ে দিবেন।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, মোবাশ্বিরুজ্জামান হাসান, মিতু আক্তার, রাকিবুল হাসান, রফিকুল ইসলাম আইনি, ইলমা খন্দকার এ্যানি, স্থানীয় সমন্বয়ক ইফফাত রাইসা নূহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *