নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের বিরুদ্ধে শিল্পপতি মনির আহমেদ চাঁদা দাবির অভিযোগ করেছেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই শিল্পপতির টাঙ্গাইল শহরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। তবে জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, এডভোকেট আহমেদ আযম খান ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ায় বসবাস করা শিল্পপতি মনির আহমেদ এশিয়াটিক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর ঢাকা, গাজীপুর ও টঙ্গীতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় মনির আহমেদ তাঁর বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে তিনি টাঙ্গাইল সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্পপতি মনির আহমেদ জানান, মঙ্গলবার তিনি তাঁর বাসভবনে কয়েকজন স্বজনকে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে সখীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ হাবিবসহ কয়েকজন ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে আহমেদ আযম খানের অনুসারী ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী তাঁর বাসায় প্রবেশ করে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় গালাগালি ও ভাঙচুর করেন। এমনকি মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিতে আসা ব্যক্তিদের কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে লাঞ্ছিত করেন।
মনির আহমেদ আরও অভিযোগ করে বলেন, এই ঘটনার তিন-চার দিন আগে এক লোক তাঁর কাছে এসে আযমকে ফোনে ধরিয়ে দেন। তখন আহমেদ আযম খান তাঁকে বলেন, ভবিষ্যতে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন থেকে তিনি (আযম) নির্বাচন করবেন। তাই ৫০ লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে সেদিন দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন আহমেদ আযম খান।
মনির আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিতে তিনি নিজে টাঙ্গাইল সদর থানায় গিয়ে তাঁর বাসায় হামলা ও চাঁদা দাবির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে এডভোকেট আহমেদ আযম খান, টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইজাজুল হক সবুজসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করেছেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, মনির আহমেদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগের তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেলা, সদর উপজেলা ও শহর বিএনপির নেতারা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা বলেন, আহমেদ আযম খানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ওই শিল্পপতি মনির আহমেদ এ অভিযোগ এনেছেন। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মনির আহমেদ একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি নিজেই চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাঁর বাসায় সভা করছিলেন। তাঁর বাসায় গিয়ে কোনো খারাপ আচরণ করা হয়নি বা ভাঙচুর করা হয়নি। চাঁদা দাবির তো প্রশ্নই আসে না।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামীল শাহীন, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, শহর বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান আলীম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইজাজুল হক সবুজ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলী, জেলা যুবদলের সদস্যসচিব তৌহিদুল ইসলাম বাবু, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান ও সাদেকুল আলম, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম, সাবেক প্রচার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আহমেদ আযম খান একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। উক্ত ঘটনার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত কিছু দলীয় নেতা-কর্মী এবং বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীরা সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। বক্তারা অনতিবিলম্বে তাদের দল হতে বহিস্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জানিয়েছেন।