সখীপুরে আমবাগান ইজারা নিয়ে তিন তরুণের সাফল্য

অর্থনীতি কৃষি লাইফ স্টাইল সখিপুর

সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে গৌড়মতি আমের বাগান ইজারা নিয়ে প্রথম বছরে সাফল্য পেয়েছেন তিন তরুণ। নাবি জাতের এই আম বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদে এবার বাগান থেকে ২০ লাখ টাকা লাভ হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

ওই তিন তরুণ উদ্যোক্তা হলেন মামুন শিকদার, সাজ্জাদ হোসেন রবিন ও গোলাম মওলা। সখীপুর পৌরসভার দেওয়ানচালা এলাকায় আমবাগানটির অবস্থান। এখানে সাড়ে চার একর জমিতে ১ হাজার ২০০ আমগাছ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছেই আম ধরেছে।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গৌড়মতি প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভাবিত একটি নতুন জাত, যা ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম পাওয়া যায়। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর ও টাঙ্গাইলের কিছু এলাকায় এই আমের চাষ স্বল্প পরিমাণে সম্প্রসারিত হয়েছে। গৌড়মতি সাধারণত আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বাজারে ওঠে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই আম পাওয়া যায়।

এ বছর সখীপুর উপজেলায় আমের চাষ হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গৌড়মতি আমের আবাদ ৩০ হেক্টরে। গৌড়মতি প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভাবিত একটি নতুন জাত, যা ২০১২ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম পাওয়া যায়। উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর ও টাঙ্গাইলের কিছু এলাকায় এই আমের চাষ স্বল্প পরিমাণে সম্প্রসারিত হয়েছে।

সম্প্রতি সখীপুর পৌরসভার দেওয়ানচালা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাগানে প্রতিটি আমেই ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি গাছে আম নয়, যেন সোনালি রঙের ব্যাগ ঝুলছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের একজন সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গৌড়মতি আমের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। পোকামাকড়ের হাত থেকে আম বাঁচাতে ব্যাগিং করতে হয়। তাই অন্য আমের তুলনায় এতে একরপ্রতি খরচ প্রায় এক লাখ টাকা বেশি হয়। অন্যদিকে ব্যাগিং করার কারণে ওই আমের গায়ে কীটনাশক ছিটানো হয় না। ফলে আম থাকে বিষমুক্ত।

মামুন শিকদার জানান, এই বাগানে সাড়ে চার একর জমিতে ১ হাজার ২০০ আমগাছ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি গাছেই আম ধরেছে। বাগানটি ১০ বছরের জন্য তাঁরা ইজারা নিয়েছেন। বাগানমালিক প্রতিবছর ১০ লাখ টাকা পাবেন বলে চুক্তি হয়েছে। এবার ব্যাগিংসহ খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। বাগান থেকেই পাইকারিতে প্রতি মণ ৭ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছে। খরচ বাদে ২০ লাখ টাকা লাভ হবে।

দেওয়ানচালা এলাকায় আমের বাগানটি তৈরি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন আহমেদ। আগে তিনি লন্ডনে ছিলেন। দেশে ফিরে প্রথমে তিনি পেয়ারাবাগান করেন। প্রায় তিন বছর আগে তিনি সাড়ে চার একর জমিতে গৌড়মতি আমের বাগান করেন। টপ কাটিং পদ্ধতিতে এই জমিতে ১ হাজার ৭০০ আমের চারা লাগানো হয়।

শাহীন আহমেদ বলেন, নতুন কিছু করার জন্য দেশে ফিরে এসেছিলাম। প্রথমে পেয়ারার বাগান করে সফলতা পাই। এরপর গৌড়মতি আমের বাগান করি। ওই বাগানটি ইজারা দিয়েছি। বর্তমানে তাইওয়ান জাতের আরেকটি নতুন বাগান করছি।

আমবাগানের পরিচর্যার কাজে বেশি সময় দেয়া মামুন শিকদার জানান, নভেম্বরের শুরুতে গাছের পুরোনো মুকুল ও ডালপালা কেটে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের দিকে পানি ছিটিয়ে গাছ ধুয়ে ফেলা হয়। জানুয়ারি মাসে গাছে নতুন পাতা গজায়। তখন পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক ছিটিয়ে দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চে গাছে মুকুল আসা শুরু করে। তখন কয়েক দফা কীটনাশক ছিটানো হয়। আমের গুটি একটু বড় হলে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (অর্থাৎ বিক্রি পর্যন্ত) ব্যাগের ভেতরেই আম রাখতে হয়। সারা বছরই আমবাগানের পরিচর্যা করতে হয়। মালিকপক্ষের দুজন ছাড়াও চারজন শ্রমিক সারা বছর স্থায়ীভাবে কাজ করেন। আম বিক্রির সময় বাড়তি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন ওই তিন তরুণের আমবাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় এ জাতের আম সম্পূর্ণ বিষমুক্ত থাকে। বেশি দামে বিক্রি করতে পারায় সখীপুরের কৃষকেরা গৌড়মতি আম চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *