ঘাটাইল প্রতিনিধি: অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় ঘাটাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সমকালের ঘাটাইল প্রতিনিধি মাসুম মিযার হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েন সাগরদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহার। এ ঘটনায় সাংবাদিক মাসুম মিয়া মঙ্গলবার রাতে ঘাটাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর-সাধারণ ৩য় পর্যায়) কর্মসূচির উন্নয়ন প্রকল্পে সাগরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের প্রকল্প দেন চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার। যার বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। বরাদ্দের ওই টাকায় ‘ক্যামপ্রো’ ব্র্যান্ডের মাত্র পাঁচটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর দাম যাচাই করে জানা যায় প্রতিটি সিসিটিভি ক্যামের দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা। সেই হিসেবে পাঁচটি ক্যামেরার দাম ১২ হাজার ২৫০ টাকা। অথচ এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ্ বাহার এমন দুর্নীতি করায় গত ১৪ জুলাই ‘আড়াই হাজার টাকার সিসিটিভি ক্যামেরা ৩২ হাজারে ক্রয়’ শিরোনামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই চেয়ারম্যান সমকাল প্রতিনিধির উপর ক্ষিপ্ত হন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় মানুষের কাছে বলে বেড়ান সমকাল প্রতিনিধিকে সাগরদিঘী এলাকায় যেখানেই পাবে সেখানেই বেঁধে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে।
২৭ আগষ্ট সংবাদ সংগ্রহ সংক্রান্ত কাজে ঘাটাইল প্রেসক্লাবের সহযোগী সদস্য সৈয়দ মিঠুন ও বিপ্লব হোসেন সাগরদিঘী গেলে তাদের কাছে চেয়ারম্যান বলেন, সমকাল প্রতিনিধি মাসুমকে সাগরদিঘী সময় মত পেলে হাত-পা ভেঙে পঙ্গু করে দেওয়া হবে। তিনি তার বাহিনীকে এ ধরণের ঘটনা ঘটানোর কথা বলে রেখেছেন। এর আগে গত ২২ আগষ্ট ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের সামনে চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ্ ওই অফিসের কর্মচারীদের সমকালে প্রকাশিত সংবাদ মোবাইল ফোনে দেখিয়ে তাদের কাছে বলেন, ‘সাগরদিঘী লোক সেট করা আছে, সমকাল প্রতিনিধি মাসুমকে ওই এলাকায় পাইলে হাত-পা বাইন্দা ছিঁড়া ফেলব।’ চেয়ারম্যানের বলা এই কথাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ক্যামেরায় ধারণ করা ওই ভিডিও অডিও সংরক্ষিত আছে।
হুমকি দেওয়ার বিষয়ে সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুল্লাহ বাহারেরর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
ঘাটাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি বিষয়টি অবশ্যই ন্যাক্কারজনক। প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ দেওয়ার অধিকার সবার আছে। তা না দিয়ে হুমকির দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিষয়টি আইনগতভাবেই আমরা লড়ব।
সাধারণ ডায়েরীর তদন্ত কর্মকর্তা ঘাটাইল থানার উপপরিদর্শক মো. শহিদুজ্জামান বলেন, সমকাল প্রতিনিধি ও ঘাটাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদককে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকির বিষয় প্রসঙ্গে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হলাম। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হবে। পরবর্তীতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।