
গোপালপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কলেজছাত্র ইমন (১৮) মৃত্যুবরণ করেছেন। রবিবার, (১৮ আগস্ট) ভোরে তার মৃত্যু হয়। ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের ছাত্র অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ছিলেন।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াইতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ইমন গুলিবিদ্ধ হন। আহতাবস্থায় প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, মো. ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন এলাকার জুলহাসের ছেলে। তিনি অলোয়া মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ইমনের বাবা নেই। টিউশনি করে পরিবার চালাতেন তিনি। চার ভাই-বোনের মধ্যে ইমন বড়।
ইমনের সহপাঠী সাইফুল ইসলাম জানান, হেমনগর ইউনিয়নের ছাত্র অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ছিলেন ইমন। মেধাবী কলেজছাত্র ইমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সামনের সারিতে ছিলেন। গত ৪ আগস্ট বিকেলে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোরাইতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পুলিশের একটি গুলি ইমনের বুকে আঘাত করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। মুমূর্ষ অবস্থায় প্রথমে তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আজ সকালের দিকে আইসিইউতে মারা যান তিনি।
সাইফুল আরও জানান, ১০ বছর বয়সে বাবা হারানো ৪ জনের পরিবারে ইমনই ছিলেন একমাত্র কর্মক্ষম। ফলে ছেলের চিকিৎসার ব্যয় বহনে এরইমধ্যে সহায় সম্বল বিক্রি করেছেন মা রিনা বেগম। বাবার মৃত্যুর পর পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করে পরিবারের হাল ধরেন ইমন। তাঁর ছোট আরও দুই ভাই ও এক বোনে রয়েছে। সংসারে হাল ধরতে মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন মা রিনা বেগম।
আজ রোববার সকাল ৬টার দিকে তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখান সকাল পৌনে ৮টার দিকে মারা যান তিনি। ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে।