সখীপুরের বংশাই নদীতে সেতুর অভাবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে

দুর্নীতি পরিবেশ ফিচার সখিপুর

সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী দাঁড়িয়াপুর গ্রামের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বংশাই নদীতে সেতুর অভাবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সখীপুর ও বাসাইল উপজেলাকে আলাদা করা বংশাই নদীতে যুগ যুগ ধরে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে দুই উপজেলার মানুষজন।

 

 

এখানে শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও বর্ষা মৌসুমে নৌকা হচ্ছে নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। সঙ্গে ভারি মালামাল বা রোগী থাকলে অতিরিক্ত ৩০ কিমি. ঘুরে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় তাদের।

সরেজমিনে জানা যায়, বংশাই নদীর এপারে সখীপুর- ওপারে বাসাইল। এখানে রয়েছে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাদ্রাসা, ৩টি কিন্ডারগার্টেন ও ৪টি সাপ্তাহিক হাট। সখীপুর উপজেলার দাঁড়িয়াপুর, লাঙ্গুলিয়া, আকন্দপাড়া, আবাদি, চাকলাপাড়া, কৈয়ামধু, বেতুয়া, শোলাপ্রতিমা ও দেওবাড়ি এবং বাসাইল উপজেলার সুন্না, গিলাবাড়ি, কল্যাণপুর, মৈলানপুর, ডুমনিবাড়ি, বার্থা, কলিয়া ও কাউলজানি গ্রামের লোকজন এ নদী দিয়ে পারাপার হন।

উপজেলার দাঁড়িয়াপুর ইউনিয়নের বরইতলা এলাকায় বংশাই নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। ওই সাঁকো দিয়েই দুই পারের লোকজনসহ বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। আবার বর্ষা মৌসুমে নৌকাই একমাত্র ভরসা তাদের। সেতু না থাকায় দুই উপজেলার ১৪ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

দাঁড়িয়াপুর গ্রামের বৃদ্ধ হাকিম মিয়া বলেন, নেতারা ভোটের সময় বলে ব্রিজ করে দেবে। ভোটের পর আর তাদের খবর থাকে না। এভাবে যৌবনকাল থেকে ব্রিজ তৈরি হবে হবে একথা শুনতে শুনতে বুড়ো হয়ে গেলাম! এখনো ব্রিজ হয়নি।

আরেক বৃদ্ধ আজগর আলি বলেন, কত এমপি-চেয়ারম্যান হইলো, সবাই আশা দেয়, কেউ আর ব্রিজ করে দেয় না। মরার আগে কি ব্রিজ দেখে যেতে পারমু।

স্থানীয় নাহিদ মিয়া তিনি বলেন, আশপাশের এলাকার ছেলে-মেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। চলাচলের সুবিধার জন্য শুকনো মৌসুমে এলাকার লোকজন ১০০ গজের সাঁকো নির্মাণ করেন। তবে বর্ষায় পানিতে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। তখন নৌকা দিয়ে চলাচল করেন লোকজন। ফলে দুই পাড়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যদের ভোগান্তি পড়তে হয়। আমরা একটি ব্রিজ চাই। এই ব্রিজটা হলে আমাদের সব দিকেই সুবিধা হবে।

দাঁড়িয়াপুর গ্রামের আল আমিন বলেন, এখানে ব্রিজ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা নৌকা ও বাঁশের সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। নৌকাডুবিতে প্রাণও চলে গেছে ওই নদীতে। সরকার তো কত উন্নয়ন করেছেন দেশে। আমাদের একটাই দাবি এই নদীতে ব্রিজ করা হোক। তাহলে আর দুর্ভোগ পোহাতে হবে না আমাদের।

গিলাবাড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও বরইতলা ঘাটে কোনো সেতু করা হলো না। চেয়ারম্যান এমপিরা সবাই আশা দিয়েছেন, কেউ তাদের কথা রাখলেন না। এই ব্রিজটা হলে অর্থনৈতিকসহ সব দিকে সুবিধা হবে। কষ্ট করে ৩০ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হবে না।

গিলাবাড়ি গ্রামের কৃষক ছানোয়ার মিয়া বলেন, এখানে ব্রিজ হলে খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও মুমূর্ষু রোগী নিয়ে সখীপুর যেতে মাত্র ৮ কিমি রাস্তা পাড়ি দিতে হতো। আর এখন ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়। গর্ভবর্তী নারী ও বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের ভোগান্তির শেষ নাই। আমরা ব্রিজ চাই।

কৃষক মতি মিয়া বলেন, ধান বিক্রি করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। সময় মতো বাজারে পৌঁছাতে না পারলে দাম পাওয়া যায় না। রোগীদের বহনে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। ব্রিজটা হলে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এক দিকে অর্থনৈতিকভাবে আমরা লাভবান হবো, আরেক দিকে আমাদের সময়ও কম লাগবে।

দাঁড়িয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী আসিফ জানায়, আমি স্থানীয় এমপির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছিলাম। এমপি বলেছিলেন আলোচনা করতেছি, একনেকে ওঠাব। এখন তো এমপি নাই। তারপরও দেশটা একটু স্বাভাবিক হোক। কাজের গতি আসুক খুব অল্প সময়ে মধ্যে ব্রিজটি করে দেওয়ার চেষ্টা করব।

সখীপুর এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল মিয়া জানায়, বংশাই নদীতে সেতুটির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেতুটি নির্মাণের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *