কালিহাতীর এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

অপরাধ কালিহাতী দুর্নীতি ফিচার শিক্ষা

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল করীম-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে ফুঁসে উঠেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যিনি দুর্নীতি করে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। ওই শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, স্কুলের অর্থ আত্মসাৎ ও ছাত্রদের বৃত্তি পাইয়ে দেয়ার নাম করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

 

জানা যায়, তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উপজেলায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ পদটি বাগিয়ে নেন। সরকার দরীয় হওয়ায় এতোদিন তার দুর্নীতির কথা কেউ প্রকাশ করতে পারেনি। সরকার পতনের পরপরই তার দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য সম্পদ। এদিকে বুধবার সকালে অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছে প্রধান শিক্ষক নাজমুল করীম। তার বাবা খরচ চালাতে না পারায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ফুলতলা তার মামার বাড়ি গিয়ে ফের পড়াশুনা শুরু করেন। প্রাইভেট পড়িয়ে ও মামাদের সহযোগিতায় তিনি বিএসসি পাস করেন। পড়ালেখা শেষে কিছু বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। গত চৌদ্দ বছর পূর্বে এলেঙ্গা হাই স্কুলে শিক্ষক হিসেবে চাকরি হলে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলীয় প্রভাবে হয়ে যান প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় শিক্ষক নেতা হয়ে শুরু করেন সীমাহীন দুর্নীতি। প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পরিবারসহ বসবাস শুরু করেন। অথচ এলেঙ্গা পৌর শহরের শামসুল হক মহাবিদ্যালয়ে পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে তার নির্মাণাধীন ৪ তলা ভবন। এছাড়াও টাঙ্গাইল শহরের বটতলাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ৩টি ফ্ল্যাট। এছাড়া, তিনি কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন তার স্ত্রীর নামে এমন অভিযোগ করেন ছাত্ররা।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছিুক ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানায়, এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দেয়। সেই ছাত্রদের এ প্লাস পাইয়ে দেয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা করে চুক্তি করে প্রধান শিক্ষক। এই সিন্ডিকেটে তিনি বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষককে ব্যবহার করতেন।

নিয়োগ বাণিজ্যে করে তিনি লাখ-লাখ টাকা দুর্নীতি করেন। অনিয়ম করে বিদ্যালয়ের ৯৮ লাখ টাকা তিনি নিজ নামে বেসিক এবং গ্রামীণ ব্যাংকে জমা রেখেছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ে ভর্তি ও পরীক্ষার সময় অনিয়ম করেও লাখ টাকা কামিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক নাজমুল করীমের গ্রামের বাড়ি এলেঙ্গা পৌরসভার কুড়িঘড়িয়া গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, নাজমুলের বাবা অসচ্ছল মানুষ ছিলেন। প্রাইভেট পড়িয়ে তারা দুই ভাই পড়ালেখা করছেন। আওয়ামী লীগ সকারের ১৫ বছরে সে কীভাবে অট্টালিকার মালিক হলেন। শুনলাম টাঙ্গাইলেও তার ৩টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ব্যাংকে কোটি-কোটি রয়েছে, এতসব কিছুর মালিক কীভাবে। তিনি কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন!

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাজমুল করীম মুঠোফোনে বলেন, তিনি কোন দুর্নীতি করেন নাই। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট পড়াতেন। বেতনের টাকা ও প্রাইভেট পড়িয়ে তিনি এসব করেছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের নামে ১ কোটি টাকা ব্যাংকে রয়েছে।

কালিহাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম আমীর হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন, তবে এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাকে ফোন করে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল করীম কয়েকদিন যাবত বিদ্যালয়ে আসছেন না। দুর্নীতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *