কালিহাতীতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

অর্থনীতি কালিহাতী দুর্নীতি পরিবেশ

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতীতে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে ৮৪ লাখ টাকার নতুন সড়ক কার্পেটিংয়ের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা দফায় দফায় মানসম্মত কাজের দাবি জানালেও, মানছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এদিকে এলাকাবাসীকে ওই কাজ ফেলে রেখে চলে যাওয়ার হুমকি দেন সাব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক নুরুল ইসলাম।

 

 

জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরের কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাদেক আলীর দোকান থেকে বাদশার বাড়ির মোড় হয়ে আফজা নেতার বাড়ি হয়ে বাংলা বাজার পর্যন্ত নতুন সড়ক কার্পেটিংয়ের টেন্ডার দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ের ৯৫০ মিটারের ওই সড়ক নির্মাণের কাজটি পায় মেসার্স ফাহিম খাদ্দিন এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা যায়, সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বিমুখা গ্রামের সাদেক আলীর দোকান থেকে বাদশার বাড়ির মোড় পর্যন্ত নিম্নমানের ইটের খোয়া এবং মাটি মিশ্রিত খোয়া দিয়ে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। সেই নিম্নমানের খোয়ার উপর দিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। এদিকে রাস্তার দুই মাথায় লোক দেখানো কিছু ভালো খোয়া ব্যবহার করা হয়। মাঝের পুরো রাস্তায় ব্যবহার করা হয়েছে মাটি মিশ্রিত খোয়া।

এ বিষয়ে সহদেবপুর ইউপির দ্বিমুখা গ্রামের হাসেম উদ্দিন বলেন, নিম্নমানের খোয়া বা পোড়া মাটি দিয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এই খোয়া ব্যবহারে নিষেধ করা সত্ত্বেও সেগুলোই ব্যবহার করা হচ্ছে। এলজিডির লোকদের সাথে সমন্বয় থাকার কারণেই তিনি কাজটি এভাবে করছেন। এ কাজ দেখাশুনার জন্যও কোনো প্রকৌশলী আসলে তারা বলেন কাজ করতেছে এটাই বেশি, ঠিকাদারকে ধরে এনে কাজ করতেছি।

একই গ্রামের মজনু মিয়া বলেন, নতুনভাবে সড়কটি নির্মাণ করা হলেও কাজ হচ্ছে নিম্নমানের। সড়কের পশ্চিমের মাথায় কিছুটা ভালো খোয়া দিলেও তারপর থেকে নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ চলতেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বৃদ্ধ আবুল কাশেম জানান, ‘ফালাই দেওয়া রাবিশ আইনা কাজ করতেছে। আমরা বুড়া মানুষ আমগো কথা কে শুনে। কিছু কইলে তারা কয় আমরা কোন কিছু বুঝি না।’

একই এলাকার আব্দুল মোস্তফা জানান, নিম্নমানের ইটের খোয়া এবং মাটি মিশ্রিত খোয়া দিয়ে কাজ করছিলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ সময় এলাকাবাসী উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে জানালে তিনি আশ্বাস দেন নিম্নমানের খোয়া অপসারণ করা হবে।

ফাহিম খাদ্দিন এন্টারপ্রাইজের নামে কাজটি পেলেও সাব কন্টাক্টে ঠিকাদারের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগের পুরানো রেটের কাজ এটা। তাছাড়া একটি ইট ভাটা থেকে আদলা ইট কিনে রেখেছিলাম। অনেকদিন হওয়ায় ওই ইটে ময়লা জমে গেছে এবং বেকু দিয়ে দুই জায়গায় সরানোর কারণে খোয়ার সাথে খোয়ার ভুষি এসেছে। এজন্য খোয়াকে নিম্নমানের মনে হচ্ছে। এরপরও বেশ কিছু খোয়া নতুন ফেলা হয়েছে। স্থানীয়রা কাজে সহযোগিতা না করায় কাজটি পরিচালনা করা, আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এছাড়াও মালামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কাজটিতে ক্ষতি হবে। এটি আমার প্রথম কাজ, এ কারণে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে স্বীকার করেন।

কালিহাতী উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) রবিউল আলম বলেন, আমি অসুস্থ ছিলাম। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার স্যার, এক্সচেঞ্জ স্যারকে সাথে নিয়ে পরিদর্শনে গিয়ে সেখান থেকে কিছু খোয়া অপসারণ করা হয়েছে। তার পরেও আমি এসে দেখবো কিছু করা যায় কিনা।

সহদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান খান ফরিদ বলেন, এই সময়ে আমার এলাকায় সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করে কাজ করা এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।

টাঙ্গাইল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি কালিহাতী যাবো বিষয়টি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *