ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইল উপজেলার ঘাটাইল ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের কাবেল মিয়া যে বয়সে হাতে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, ঠিক সেই বয়সে অভাবের সংসারে অর্থের জোগান দিতে ধরেন ভ্যানের হ্যান্ডেল। ১১ বছর থেকে শুরু হওয়া এ কাজের ইতি টানতে চেয়েছিলেন ৪১ বছর বয়সে এসে। শেষ সম্বল ভ্যানগাড়িটি বিক্রি করে জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে একটু সুখের আশায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন মালেশিয়ায়। কিন্তু বিমানের টিকিট জটিলতায় যেতে পারেননি। উল্টো হতাশা আর কপালে চিন্তা খেলা করছে তাঁর। প্রবাস যেতে চড়া সুদে জোগাড় করেছিলেন ৫ লাখ টাকা। সেই টাকার সুদ দিতে গিয়ে আবার নিচ্ছেন সুদে ঋণ। এ যেন আঁধার দূর করতে গিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে অন্ধকার। কাবেলের বাড়ি কাবেলের মতো এই উপজেলার অনেকেই মালয়েশিয়া না যেতে পেরে ঋণের সুদ টেনে ক্লান্ত।
এ প্রসঙ্গে দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা কাবেল মিয়া বলেন, দুই মাস ধরে বেকার বসে আছি। ৫ লাখ টাকার সুদ পরিশোধ করতে বেছে নিতে হচ্ছে আবারও সুদে ঋণ। তিনি জানান, আদম ব্যবসায়ী আলম মিয়া নাকি তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন মালয়েশিয়া লোক নেওয়া শুরু হলে তাঁকেও নেওয়া হবে। মোবাইল ফোনে কথা হয় আলম মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, মূলত বিমানের টিকিট-স্বল্পতার কারণে কাবেলকে নেওয়া যায়নি। ওই সময় মালয়েশিয়া লোক নেওয়ার কথা ছিল জিটুজি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সিন্ডিকেটের কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে কাবেলকে ৯৬ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা সিন্ডিকেট কেটে রেখেছে। আর ভিসার টাকা মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আনা যাচ্ছে না। কাবেলকে অন্য কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
সংগ্রামপুর ইউনিয়নের খাগরাটা গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।’ এই প্রলাপ করে তাঁর বৃদ্ধ মা প্রতিদিনই কান্না করেন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ টাকাই ঋণ করে এনে দিয়েছিলাম। ব্যাংক থেকে তোলা টাকার কিস্তি দিতে হয় সপ্তাহে ৬ হাজার টাকা। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। টাকাও ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, ওই সময় পুরো টাকা অর্থাৎ সাড়ে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার পর ঢাকায় নিয়ে আদম ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া তাঁর কাছে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাবলুকে তিনি বলেন, বাড়িতে আমার দুইটা গরু আছে, আপনি তা বিক্রি করে নিয়ে নেন। তাও আমাকে মালয়েশিয়া পাঠান। কিন্তু তারপরও পাঠালেন না। দুই দিন ঢাকায় থাকার পর আদম ব্যবসায়ী জানান, এখন টিকিটের দাম বেড়ে গেছে। তোমাদের নিতে পারব না। পরে যখন টিকিটের দাম কমবে, তখন পাঠাব। এবারের মতো বাড়ি চলে আসতে বললেন। এখন টাকাও দেয় না, মালয়েশিয়ায়ও পাঠায় না।
সাত্তারের মতো একই আদম ব্যবসায়ীর কাছে মালয়েশিয়া যেতে টাকা জমা দেন রিপন মিয়া, লিটন মিয়া, আসিফ রানা ও জসিম মিয়া। তাদের জোগাড় করা টাকাও ধার ও সুদে আনা।
আরআই এজেন্সির মাধ্যমে প্রবাসে লোক পাঠান বাবলু মিয়া। মোবাইল ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিমানের টিকিটের দাম বাড়ার কারণে মালয়েশিয়া পাঠাতে পারেননি। তবে যারা মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের অন্য দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।