নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলার সর্বত্র বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমের মধ্যে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক দিন ধরে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় আবাসিক ও শিল্পকারখানাসহ প্রায় ১১ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এসব গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে মাত্র ১৩০ থেকে ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে টাঙ্গাইল জোনে ৭টি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জোনে ৫টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
টাঙ্গাইল জোনের জোনাল অফিসের আওতাধীন ৬ লাখের বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে এবং ময়মনসিংহ জোনাল অফিসের আওতায় ৪ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। জেলার ছোট বড় ৮ শতাধিক শিল্পকারখানায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এসব শিল্পকারখায় পাঁচ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করে থাকেন।
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন মার্কেটসহ সদর উপজেলার কাগমারা, বাসাখানপুর, ধরেরবাড়ীর কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব স্থানে জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে তাদের বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট ও রেস্তোরাঁর মালিক আমিনুল ইসলাম দুলাল বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে এমনিতে ক্রেতা কম। এরপর কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং হওয়ায় ক্রেতা পাওয়া যায় না। তাদের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল শহরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, দিন-রাত মিলে ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা জেনারেটর চালাতে হয়। এতে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হচ্ছে।
সদর উপজেলার বাসাখানপুর গ্রামের সোহেল রানা বলেন, আমরা দিনে ১০ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাই না।
ধরেরবাড়ী গ্রামের আফাজ মিয়া বলেন, ভ্যাপসা গরম, এর মধ্যে ঘন ঘন লোডশেডিং। ছোট নাতি-নাতনি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। যে গরম তা আমরা সহ্য করতে পারি না। আর শিশুরা কীভাবে সহ্য করবে। তারা শুধু কান্না করে।
সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের তাঁত শাড়ী ব্যবসায়ী আজাহার মিয়া বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শাড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারছে না।
এ ব্যাপারে পল্লীবিদ্যুৎ টাঙ্গাইল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, আমাদের এ জোনে গ্রাহক সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। এ এলাকায় ছোট বড় মিলে ৪৫০ শিল্পকারখানাসহ ও আবাসিক গ্রাহকের জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৬০-১৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে তার চেয়ে কিছু কম। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং বৃদ্ধি পেয়েছে।
টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, টাঙ্গাইল পৌরসভায় ৪৭ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। টাঙ্গাইলে বিদ্যুতের ১৫০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও ১০৫ থেকে ১১৫ মেগাওয়াট সরবরাহ পাওয়া যায়। এ ঘাটতি লোডশেডিং এর মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়।