নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুরে খাল ভরাট করে ঘরবাড়ি ও ব্রিজ নির্মাণের কারণে কৃত্রিম বন্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। খালের মুখ বন্ধ করে নির্মাণকাজ করায় পানি ভাটির দিকে যেতে না পারার ফলে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী খালের মুখ বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও এর কোনো সমাধান হয়নি। এতে দীর্ঘ সাত বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রসুলপুরসহ আশেপাশের এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রসুলপুর গ্রামের মাঝখান দিয়ে পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে একটি খাল প্রবাহিত। খালের উত্তর পাশে রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় ও রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ পাশে হাটখোলা। খালটি রসুলপুর পুরোনো ব্রিজের নিচ থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক ঘেঁষে প্রবাহমান ছিল। খালটির পূর্ব দিকে যে প্রবাহ ছিল তা কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। দক্ষিণ দিকের প্রবাহটি ২০১৭ সালে টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কটি ফোরলেনে রূপান্তরিত করার সময় ভরাট করে ফেলা হয়। ফলে খালের পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে বর্ষা এলেই বাধাগ্রস্ত উপচেপড়া পানিতে বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, বিদ্যালয়ের চারদিকের রাস্তাঘাট, হাটখোলা এবং পার্শ্ববর্তী বহু বাড়িঘর ডুবে যায়।
রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান সরকার বলেন, ২০১৭ সালে যখন ফোরলেনের কাজ হয় তখন মূল ব্রিজের নিচ দিয়ে খাল প্রবাহমান ছিলো, পূর্ব দিকে কিছু দূর আসার পরে খালের মুখ বন্ধ করে ফোরলেন প্রকল্পের কাজ করায় এবং কিছু লোকজন বাড়ি ঘর নির্মাণ করার কারণে বর্ষার পানি বের না হতে পেরে স্কুল মাঠ এবং বাজারে ঢুকে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, গত কয়েক দিন আগে টানা বৃষ্টি হওয়ায় স্কুল মাঠে পানি থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঠে নিয়ে একত্রে সমাবেশ এবং সকল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, সেই সাথে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করা এবং আমাদেরও যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। এই মর্মে গত দুইদিন আগে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে খালের মুখ বের করার জন্য পদক্ষেপ নিতে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।
রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রাশেদ রহমান বলেন, এলাকার কিছু অসাধু মানুষের খাল ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণ ও ফোরলেন প্রকল্প কর্তৃক অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট করে ব্রিজ নির্মাণ করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। খালের মুখ বন্ধ না হলে এভাবে কৃত্রিম বন্যা ও দুর্ভোগের সৃষ্টি হতো না। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে খালের মুখ বের করার জন্য পদক্ষেপ নিতে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি তারা এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিব। তিনি আরো জানান, যারা খাল বন্ধ করে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর নিয়ে দেখছি সেখানে কোনো অবৈধ দখলদার আছে কিনা। অবৈধ দখলদার থাকলে সেগুলো উচ্ছেদ করে খালের মুখ বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।