নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও লোকালয়ে পানি জমে আছে। এর মধ্যে যমুনাসহ বিভিন্ন নদীর পানি আবার নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় পাঠদান বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুলে শিক্ষকরা নিয়মিত যাচ্ছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, বন্যার পানি বিদ্যালয়ের চতুর্দিকে প্রবেশ করায় প্লাবিত হয়েছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। পাঠদান বন্ধ থাকার সংখ্যা প্রাথমিক বিদ্যালয়েই বেশি। এদিকে, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ষান্মাসিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বন্যার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। তবে কয়েকটি বিদ্যালয়ে পানি থাকায় পরীক্ষা কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শাখা নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া, ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা ব্রিজ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষজন এখনও পানি বন্দি রয়েছেন।
এদিকে জেলার অনেক জায়গার বানভাসীরা ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সপ্তাহখানেক ধরে এসব মানুষজন পানিবন্দি থাকায় তীব্র সুপেয় পানির অভাবে পড়েছেন। এছাড়া অনেক এলাকায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এতে নিম্ন পরিবারের খেটে খাওয়ার মানুষজন নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনি জানান, সপ্তাহখানেক হলো কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, খানুরবাড়ি ও স্থলকাশির মানুষজন পানিবন্দি রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌছায়নি বন্যার্তদের মাঝে। অনেক দুস্থ পরিবার কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শিক্ষকদের দাবি, যেহেতু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসছে না সেখানে পানি মাড়িয়ে নিয়মিত শিক্ষকরা অযথাই বিদ্যালয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পানি ভেঙেই শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও আঙ্গিনায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার ভূঞাপুরে ১২টি এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ৩১টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত খোলা রয়েছে। অন্যদিকে কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ক্লাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলার খানুরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহমান জানান, বিদ্যালয় খোলা রয়েছে। বিদ্যালয়ের চর্তুদিকে পানিসহ আশপাশের এলাকায় পানি থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা না আসলেও শিক্ষকরা নিয়মিত যাচ্ছেন পানি মাড়িয়ে। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, উপজেলার সবগুলো মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রয়েছে। নিয়মিত পরীক্ষা হচ্ছে। তবে বন্যার কারণে উপজেলার চরাঞ্চলের শুশুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ভদ্রশিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের পানি রয়েছে। তাই বিদ্যালয় দু’টির পরীক্ষা কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, বন্যার কারণে দুটি উপজেলায় ৪৩টি বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। ফলে ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় ক্লাস কার্যক্রম হচ্ছে না।