ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুরে নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণে অর্থ দিয়েও পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ২২ শিক্ষার্থীর ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানের ওপর দায় চাপিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঐ কলেজের অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক ও সাময়িক বহিষ্কৃত লোকমান হোসেন তালুকদার।
মঙ্গলবার, ৯ জুলাই সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলা নিকরাইল বাজারের সোনালী ব্যাংকের নিচতলায় বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেন তালুকদার তার অফিসে মিথ্যাচার ও অপ-প্রচারের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
লিখিত বক্তব্যে বাংলা প্রভাষক লোকমান হোসেন তালুকদার বলেন, ফরম পূরণে নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৮ হাজার টাকা বেশি দাবি করেন। পরে কলেজের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা আমার কাছে আসলে তাদের থেকে নাম, ঠিকানা, রোল লিখে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করি। পরবর্তীতে ওই ২২ শিক্ষার্থীর থেকে কম টাকা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির কাছে ফরম পূরণের টাকা জমা দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের এডমিট (প্রবেশপত্র) দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এরপর গত ২৭ জুন কলেজ কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণকৃত শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং সেই অনুষ্ঠানে আমি নিজেও বক্তব্য রাখি। এ সময় অনুষ্ঠানে পরীক্ষা বঞ্চিত ২২ শিক্ষার্থীও উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ২৬ ও ২৭ জুন তারিখে কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। পরে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে জানায়, ‘তোমাদের ফরম পূরণ হয়েছে। শনিবার এডমিট নিয়ে পরীক্ষা দিও’।
এরপর ২৯ জুন অধ্যক্ষ কলেজে আসেন এবং দুপু্রে ঘোষণা দেন ওই ২২ শিক্ষার্থীর ফরমফিলাপ হয়নি, ওরা পরীক্ষা দিতে পারবে না। তিনি বলেন, তোমরা লোকমানের কাছে টাকা দিয়েছো তার কাছে যাও। সে কলেজে বা বোর্ডে টাকা জমা দেয়নি। এই বিষয়টি কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আমাকে জানায়। পরে জানতে পারি কলেজের একজন দাতা সদস্য আজিজুল হক মিন্টু মাস্টারসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক ২২ শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে বিরোধীতা করে। পরে তাদের আমি জানাই যে, বিষয়টি কলেজের সভাপতি মহোদয়কে অবহিত করে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করলে সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পরে শিক্ষার্থীরা কলেজের সভাপতি বরাবর আবেদন নিয়ে যেতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান পরীক্ষা কমিটির মাধ্যমে তাদের যেতে না দিয়ে ঘটনাটি মিমাংসার নামে কলেজে পুলিশ এনে শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হট্টগোল করানো হয় এবং বিকালে জানায়, ২২ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারবে না। পরে বিকালেই ২জন অভিভাবক ও ২ ছাত্র নিয়ে ঢাকা বোর্ডে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলে তখন সংবাদকর্মীরা আমার বক্তব্য চাইলে তাদের বলি সময় কম, পরে বিস্তারিত জানাব।
এরপর ওইদিন রাতেই বোর্ডে গেলে অফিস বন্ধ পাই। ৩০ জুন পরীক্ষার প্রথম দিন সকালে বোর্ড গেলে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুহিন ইসলাম নাহিদ জানান, ২২ শিক্ষার্থীর এডমিট প্রস্তুত ছিল। কিন্তু আপনাদের কলেজের অধ্যক্ষ বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে এডমিট কার্ড বাতিল করেন।
লোকমান হোসেন তালুকদার বলেন, কলেজের কতিপয় কিছু প্রভাবশালী সদস্য ও শিক্ষকগণ আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার অপরাধের জন্য কলেজ যে শাস্তি দিতো আমি মাথা পেতে গ্রহণ করতাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের কারণে ওই দরিদ্র ২২ শিক্ষার্থীর এডমিট কেন বাতিল করল কর্তৃপক্ষ। তাদের পরীক্ষা থেকে কেন বঞ্চিত করা হলো। এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তদের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, প্রভাষক লোকমান হোসেন তালুকদারের অভিযোগ বিষয়ে জানতে নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করার পর তিনি রিসিভ করে জানান, আমি এখন নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি, পরে কল দিচ্ছি। পরে কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ফোন না পেয়ে পুনরায় তাকে একাধিক ফোন করলে তিনি আর রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন কলেজে প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে পায়নি ওই ২২ শিক্ষার্থী। পরে কলেজ থেকে তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। রবিবার ৩০ জুন সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে নিকরাইল পলশিয়া রানী দীনমনি উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে গেটে তালা ও বিক্ষোভ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালায়। এসময় কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতিতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক সমস্যা সমাধানের আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে কেন্দ্র ত্যাগ করে। তবে বিনা কারণে পুলিশ শিক্ষার্থীদের মারপিট করেছে বলে অভিযোগ তাদের। চলমান পরীক্ষায় এ বছর নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু ফরম পুরণে অর্থও দিয়ে ২২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।