ধনবাড়ী প্রতিনিধি: ধনবাড়ী উপজেলায় সেতু নির্মাণের জন্য বৈরান নদের উৎসমুখের কাছাকাছি বাঁধ নির্মাণ করেছে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিকল্প যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য কালভার্ট বা ছোট সেতু নির্মাণ না করে ঠিকাদার ওই নদে আড়াআড়ি বাঁধ দেয়ার কারণে নদে পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বৈরান নদের ভাটি অঞ্চলের ৩৪ কিলোমিটার এলাকা অর্ধমৃত হয়ে পড়েছে।
ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ধনবাড়ী-মুশুদ্দি সড়কের পাইস্কা বাজারের কাছে বৈরান নদের ওপর ৫৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮ মিটার প্রস্থের একটি নেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৬২ টাকা। এটি নির্মাণ করছে মেসার্স ফ্রেন্ডস কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ (জেবি)। গত বছরের ৬ জুন শুরু হওয়া নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১১ মে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা গেছে, ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি এলাকার ঝিনাই নদ থেকে বৈরান নদের সৃষ্টি। নদটি ধনবাড়ীর, গোপালপুর, ভূঞাপুর ও ঘাটাইলে স্বর্পিলাকৃতিতে ৩৬ কিলোমিটার ঘুরে আবার টিকরী এলাকায় ঝিনাই নদে যুক্ত হয়েছে। ১৫টি খাল ও অসংখ্য বিলের মাধ্যমে অন্তত ২২ গ্রামের মানুষ উপকৃত হতো। কিন্তু নদটিতে বাঁধ দেওয়ায় খালগুলো বর্তমানে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। স্রোত না থাকায় পোলট্রির বর্জ্য এবং ময়লা-আবর্জনা পচে খালগুলোর পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ মে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অনেক কাজ বাকী রয়েছে। নদের দুই পাশে সেতুর নির্মাণসামগ্রী পড়ে আছে। বর্তমানে নির্মাণকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। মাঝের দুটি পিলার ও গার্ডারসহ ভিত্তি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে। বর্তমানে একাংশে পাটাতন বিছানো রয়েছে। নদের ওপর নির্মিত বাঁধে বিভিন্ন বয়সের মানুষ পায়চারি করছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাঁধটি ধসে পানিপ্রবাহের পথ উন্মুক্ত হলে তারা সকলে উপকৃত হবেন।
পার্শ্ববর্তী গোলাপুর উপজেলার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাস ধরে বৈরান নদে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। নদের সঙ্গে যুক্ত পুকুরজানি খাল, কুইচামারী খাল, চন্দবাড়ী খাল, ভেদাখালী খাল, মির্জাপুর খাল, খাগবরিয়ান খাল, পলশিয়া খালসহ অন্তত ১৫টি খাল, অসংখ্য নালা-বিল শুকিয়ে গেছে। এদিকে হাদিরা ও ধোপাকান্দি ইউনিয়নে নদের পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্যা মুরগির খামারের বিষ্ঠা আর ময়লা-আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখি, ধনবাড়ীর পাইস্কা বাজারের কাছে নদে বাঁধ দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। পরে বিষয়টি আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনকে জানাই।’
কোনাবাড়ী এলাকার ইউসুফ আলী বলেন, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। আর নদে কচুরিপানার স্তূপ সৃষ্টি হয়েছে। নন্দনপুরের আব্দুল জলিল রতন বলেন, পাইস্কা এলাকায় নদে বাঁধ দিয়ে আমাদের জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। নদে সৃষ্টি কচুরিপানার স্তূপের ওপর দিয়ে হেঁটে এপার থেকে ওপার যাওয়া যায়। পানিপ্রবাহের পথ উন্মুক্ত না হলে নদটি মরে যাবে।
গোপালপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ হাসান জামি বলেন, বৈরান নদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রী এটি খনন করেছেন। একজন ঠিকাদারের সুবিধা দেখে পুরো এলাকার জনসাধারণের ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে তাঁরা ঠিক করেননি। বিষয়টি এলজিইডির দায়িত্বশীলদেরও দেখা উচিত ছিল।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘আমরা শিডিউল মেনেই কাজ করছি। দ্রুতই কাজ শেষ করব।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ধনবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম মণ্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’