টাঙ্গাইলে নদীর পানি বাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি!

কালিহাতী গোপালপুর টাঙ্গাইল সদর দুর্ঘটনা পরিবেশ ফিচার ভূঞাপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদীর পানি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনও অব্যাহত আছে।

 

 

ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ অব্যাহত আছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে এসব উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাড়ি-ঘর ও ফসলী জমি। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

শনিবার, ৬ জুলাই সকাল নয়টায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার, ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা ব্রীজ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, এবং মধুপুর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, শুক্রবার ৫ জুলাই উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া ও নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় কয়েক দিন ধরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ খুব আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এদিন মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশীদ এবং টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুল হক মাসুদ। তারা ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের কাছে দুই একদিনের মধ্যেই জিওব্যাগ ফেলার আশ্বাস দেন।

গত বছর বন্যায় ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা গাইড বাঁধের জিওব্যাগ আনলোড ড্রেজারগুলোর কারণে ধসে যাচ্ছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা ও আধ পাকা সড়ক, গাইড বাঁধ বসত বাড়ি, মসজিদ, মন্দির, ছোট বড় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

নদীপাড়ের মানুষের অভিযোগ, গেল বছর ভাঙনরোধে বিভিন্ন স্থানে নামমাত্র জিওব্যাগ ফেলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেগুলো এখন ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলে। দরিদ্র মানুষের বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলা হয় না।

গত বছর ভাঙনের শিকার স্থানীয়রা বলেন- শুকনো মৌসুমে বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে নদীতে জেগে ওঠা চর কেটে ট্রাকযোগে বিক্রি করেন। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। যার কারণে নদীতে পানি আসলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়।

যমুনা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত পাটিতাপাড়া বাহাদুর টুকনা এলাকার আবু সুফিয়ান ও জালাল প্রামাণিক বলেন, যমুনা নদীটি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় দেড় থেকে দুই মাইল দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে যমুনার ভাঙনে আমাদের ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের থাকার জায়গাটুকুও ভেঙে যাচ্ছে।

এদিকে যমুনায় পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্ত মানুষগুলো মাথা গোঁজার একটু জায়গার আশায় হন্যে হয়ে খুঁজছে উঁচু জায়গা। তারা বিশুদ্ধ পানি এবং নিজেদের খাদ্য সংকটে পড়েছেন। উপরন্ত গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

 

 

নিকরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুদুল হক মাসুদ জানান, গত দুই দিন ধরে মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া ও বাহাদুর টুকনা এলাকায় নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। তারা এসে পরিদর্শন করে অতি দ্রুত জিওব্যাগ ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন।

ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রশীদ বলেন, কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে কিছু কিছু জায়গায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। বেশ কিছু বাড়ি ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙন কবলিত এলাকার একটি স্থানে ভাঙন প্রতিরোধে জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। অন্যান্য ভাঙন কবলিত স্থানেও ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত জিওব্যাগ ডাম্পিং-সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন্যার্তদের সাহায্যার্থে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুতই তাদের জন্য বরাদ্দ পাবো বলে আশা করছি।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বন্যার পানি বাড়ার সাথে সাথে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এসব এলাকায় জিওব্যাগের মাধ্যমে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

উল্লেখ্য, পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনও অব্যাহত আছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানিসহ নিজেদের খাদ্য সংকটে পড়েছে; উপরন্ত গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *