ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুরের নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষক লোকমান হোসেনের প্রতারণায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না ২২ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে পরীক্ষার আগের দিন থেকে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনরা।
অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে ফরম পূরণে জালিয়াতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেনসহ জড়িত অন্যান্য শিক্ষকদের দ্রুত বহিষ্কার এবং চলমান এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার একদফা দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ভুক্তভোগী ২২ শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফরম পূরণ ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই কমিটির প্রধান করা হয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদকে। বোর্ড নির্ধারিত টাকার চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি টাকা চাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করলেও দরিদ্র ২২ শিক্ষার্থী অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা দ্বারস্থ হয় ওই কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেনের কাছে। তিনি কম টাকায় ফরম পূরণের আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তিন থেকে চার হাজার টাকা করে আদায় করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফরম পূরনের জন্য ৮ হাজার করে টাকা চায় পরীক্ষা কমিটি। নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় তাদের ফরম করতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়। ফলে তারা কলেজের শিক্ষক লোকমান হোসেনের কাছে যায় ২২ শিক্ষার্থী। টাকা জমা দিলেও পরীক্ষার আগের দিন তারা জানতে পারে ফরম পূরণ হয়নি। যার কারণে প্রবেশ পত্র ইস্যু না হওয়ায় দিতে পারছে না চলতি এইচএসসি পরীক্ষা। তারা আরো জানায়, অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কমিটি এর দায় এড়াতে পারে না।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষার দিনেও কলেজের ২২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধনটি নিকরাইল পলশিয়া রানী দিনমনী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে শুরু হয়। পরে কলেজে গিয়ে ইট-পাটকেল ছোঁড়াছুড়ি ও কলেজে হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসে।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা জানান, মুহুর্তেই চোখের পানিতে নিজের ও পরিবারের স্বপ্নগুলো ভেসে যাচ্ছে। কলেজের দুর্নীতিবাজ শিক্ষক বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেন আমাদের ২২ শিক্ষার্থীর থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়েও ফরম পূরণ না করে প্রতারণা করেছেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য আমরা পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা পরীক্ষা দিতে চাই, পরীক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে এবং প্রতারক লোকমান হোসেনের বহিষ্কার দাবি জানাচ্ছি।
জানা যায়, গত ২৯ জুন কলেজে প্রবেশপত্র আনতে গেলে ওই ২২ শিক্ষার্থীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে জানান তারা। রবিবার (৩০ জুন) সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে নিকরাইল পলশিয়া রানী দীনমনি উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে গেটে তালা ও বিক্ষোভ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে ভাঙচুর চালায়। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি প্রশাসন সমস্যা সমাধানের আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে কেন্দ্র ত্যাগ করে। তবে বিনা-কারণে পুলিশ শিক্ষার্থীদের মারপিট করেছে বলে অভিযোগ তাদের। এ বছর নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু অতিরিক্ত অর্থও দিয়ে ওই কলেজের ২২ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, ২২ জন শিক্ষার্থী চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় মঙ্গলবার সকালে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। অবৈধভাবে ফরম পূরণের কারণে তাদের ফরম পূরণের আবেদনটি বাতিল করে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কলেজ পরিচালনা কমিটি। পরে সেটি তদন্ত করে উর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।
//////////////