সখীপুরে বৃদ্ধার বসতভিটা বিক্রি করলো ছেলে: শতবর্ষী মায়ের আহাজারি

অপরাধ দুর্ঘটনা ফিচার সখিপুর

সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে বাছিরন বেগম নামের এক শতবর্ষী বৃদ্ধার ঘরসহ বসতভিটার ৬ শতাংশ জমি গোপনে বিক্রি করে দিয়েছে তারই সন্তান বাছেদ মিয়া। প্রায় ৫০বছর যাবত বাস করা সেই বসতভিটা ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বৃদ্ধা মা।

উপজেলার কালমেঘা সুবহান মার্কেট এলাকার মৃত খবির উদ্দিনের স্ত্রী বাছিরনের সাথে এ ঘটনা ঘটে। ওই এলাকারই গফুর নামের এক ব্যক্তি ক্রয় করেছেন ওই বসতভিটা ও জমি।

সোমবার সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ছয় মাস আগে শতবর্ষী বাছিরনের স্বামীর ভিটা গোপনে সন্তান বিক্রি করেন তারই সন্তান বাছেদ। এ নিয়ে গ্রাম আদালতে সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই বৃদ্ধা। মীমাংসার লক্ষ্যে গ্রাম আদালত অভিযুক্ত বাছেদকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করলে অভিযুক্ত সন্তান হাজির হয় এবং তার ভাষ্য মতে অভিযোগটিও সত্য বলে প্রমাণিত হয়। জানা যায়, ওই বৃদ্ধার সন্তান বাছেদ বৃদ্ধা মায়ের ভরণপোষণও করতো না।

স্থানীয়দের মতে, ক্রেতা গফুর মিয়ার কাজই হলো বিরোধপূর্ণ জমি কিনে নিজের দখলে নেওয়া। জমি বিক্রির পরপরই ছেলে বাছেদ মিয়া বউ-বাচ্চা নিয়ে পাশের গ্রামে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছেন। এদিকে জমির ক্রেতা গফুর মিয়া ওই বৃদ্ধাকে বসতভিটা ছেড়ে দিতে বারবার চাপ দিচ্ছেন।

বৃদ্ধা বাছিরনের অভিযোগ, প্রায় ছয় মাস আগে বাছিরনের বসতভিটার ঘরসহ ছয় শতাংশ জমি গোপনে বিক্রি করেছেন তাঁরই সন্তান মো. বাছেদ মিয়া। জমি উদ্ধার করতে বাছিরন বেগম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ মাতাব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কিন্তু একরোখা ছেলে বাছেদ মিয়া ও ক্রেতা আব্দুল গফুর মিয়া বিচার-সালিসের ধারে-কাছেই ভিড়ছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই জমির মালিক বৃদ্ধা বাছিরন। তার ছেলে বাছেদ গোপনে গফুরের কাছে বিক্রি করেছেন। গফুর এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজশে সুযোগ পেলেই গরিব ও অসহায় মানুষের জমির ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে দখল করে নেয়। এ নিয়ে ওই সিএনজি চালক গফুরের চারটি বাড়ি রয়েছে। একজন সিএনজি চালক হয়েও কিভাবে এত টাকার মালিক হলো গফুর এ নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন।

ওই জমি ক্রয়কারী গফুরের সহোদর বড় ভাই করিম মিয়াও বসটভিটা বিক্রেতা বাছেদ ও তার ভাই গফুরের শাস্তি দাবী করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছেলে বাছেদ মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হয়। একবার ফোন ধরে বাছেদের ছেলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘বাবা কানে কম শোনেন, তিনি অন্য কারও জমি বিক্রি করেন নাই। তিনি তাঁর নিজের জমিই বিক্রি করেছেন।’

বৃদ্ধা বাছিরন বিলাপ করে বলেন, ‘এইড্যা আমার স্বামীর ভিটা, এই জমির দলিল আমার নামে। আমার পোলায় (ছেলে) আমারে না জানাইয়া এই বাড়ি ভিটা বেইচা দিছে। চেয়ারম্যান-মেম্বর কেউ তার বিচার করবার পারতাছে না। তাইলে কি দেশে আইন নাই? বিচার নাই?’

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোশারফ খান বলেন, বিষয়টি মীমাংসার লক্ষ্যে আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু বয়স্ক মহিলার ছেলে বাছেদ ও ওই জমি ক্রয়কারী গফুর আমাদের কারো কথা শুনে না।

বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমরা একাধিকবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বাছেদ ও গফুর কারো কথা শোনে না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এই বৃদ্ধা মহিলার ন্যায় বিচার আশাকরি এবং ওই কুলাঙ্গার সন্তান বাছেদ ও সমাজের চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারী গফুরেরও শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে ৮ নং বহুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সরকার নুরে আলম মুক্তা বলেন, ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। জমিটুকুর মালিক বৃদ্ধা বাছিরন। তাঁর ছেলে না জানিয়ে বিক্রি করেছে এবং যে ক্রয় করেছে সেও একরোখা প্রকৃতির মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *