কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দুর্নীতির অভিযোগে দলিল লেখকদের কলম বিরতি ও কালিহাতী দলিল লেখক কল্যাণ সমিতি সাংবাদ সম্মেলন করেছেন।
২৪ জুন, সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দলিল লেখক ও দাতা গ্রহিতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে গেলে ওনি বিভিন্ন কায়দায় মোটা অংকের টাকা দাবী করে বসেন।
এ বিষয়ে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ নুরুল ইসলাম সরকার জানান, সেবা গ্রহিতারা নিয়মিত হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। দলিলে মোট ২২টি কলাম থাকে এবং প্রত্যেকটি দলিলে সেই কলামগুলোতে ঘুষের সংকেত দিয়ে অর্থ আদায় করেন সাব-রেজিস্টার অফিসার। এতে সহযোগিতা করেন অফিস স্টাফ আরতি রানী ধর ও পারভীন আক্তার। জমি খারিজে একটু ত্রুটি পেলেই পর্চা ফটোকপি বাবদ ১০ হাজার টাকা করে চান। বাটারা দলিলে ১ কোটিতে লক্ষ টাকা নেন তিনি। এই অফিসার ঘুষের রাজ্য খুলে বসেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ ব্যপারে সাবরেজিস্ট্রার অফিসার মোঃ খায়রুল বাশার ভুঁইয়া পাভেলের সাথে কথা বলার জন্য সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন লাভ হয়নি। তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি।
অন্যদিকে ২৫ জুন, মঙ্গলবার কালিহাতী দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে একটি সাংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। এদিন উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার অফিস স্টাফ আরতি রানী ধরের বিরুদ্ধে ১২ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং আরতী রানী ধরের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ডিবিসি চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি সোহেল তালুকদার, ক্যামেরাপার্সন আশিকুর রহমান ও খোলা কাগজের প্রতিনিধি মামুন অফিসে প্রবেশ করেন। সাব-রেজিস্ট্রারের কর্মস্থলে প্রবেশ করা মাত্রই অফিসার খায়রুল বাশার ভুঁইয়া উত্তেজিত হয়ে ওঠে দরজা বন্ধ করে সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করেন এবং উদ্ধত্য আচরণ করতে থাকেন।
এ সময় বাইরে থাকা অন্যান্য সাংবাদিকরা অবরুদ্ধ রুমটি খুলতে বললে তিনি খুলতে অস্বীকার করেন। পরে কালিহাতী প্রেসক্লাবের সভাপতি রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুশফিকুর মিল্টনসহ সকল সাংবাদিক ও উত্তেজিত জনতার কথায় দরজা খুলে দেয়া হয়।
উপজেলা সাব রেজিস্টার এর কার্যালয়ের এজলাস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কালিহাতীতে কর্মরত সকল সাংবাদিক কালিহাতী প্রেসক্লাব ও কালিহাতী রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যরা একাত্মতা ঘোষণা করে অবস্থান নেন।
এ প্রসঙ্গে ডিভিসি টেলিভিশনের টাঙ্গাইলের নিজস্ব প্রতিবেদক সোহেল তালুকদার বলেন, আরতি রানীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তার স্বপক্ষে বক্তব্য নেয়ার জন্য গেলে সাব রেজিস্টার খাইরুল বাশার ভূইয়া পাভেল উত্তেজিত হয়ে দলিল চুরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে দরজাগুলো বন্ধ করে দিতে বলেন। এ ঘটনায় সাব রেজিস্টার প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত অথবা আমি যদি কোন অপরাধ করে থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থল ত্যাগ করছি না।
কালিহাতী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুশফিকুর মিল্টন এ বিষয়ে বলেন, চরম দুর্নীতিবাজ সাব রেজিস্টার খাইরুল বাশার ভূইয়া পাভেল ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এবং তার শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
কালিহাতী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এম এম হেলাল বাদশা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার দেশবরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক, সাহিত্যিকদের সমৃদ্ধ কালিহাতী থেকে অভদ্র, অশোভন সাব রেজিস্টারের প্রত্যাহার ও শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল স্বেচ্ছাসেবী এবং সুশীল সংগঠন আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন।
পরে বিকেলে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদের পরামর্শক্রমে অফিস টাইম শেষ হয়ে যাওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা করে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য মামুনুর রহমান মিয়া ও কালিহাতী প্রেসক্লাবের সভাপতি রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত।
এর আগে, দুপুর ১২টায় কালিহাতী দলিল লেখক কল্যাণ সমিতি নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম সরকার। বক্তব্য রাখেন, সাবেক সভাপতি ইমান আলী, সহ-সভাপতি শাজাহান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাসুম সরকার, দলিল লেখক রাম প্রসাদ বসু ও আব্দুল করিম প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, কালিহাতী উপজেলা সাব-রেজিস্টার মোঃ খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেল কালিহাতী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর থেকে দাতা-গ্রহীতাদের প্রতিটি দলিল রেজিস্ট্রিতে সরকারি উৎসে করের সমপরিমাণ অর্থ দাবি করছেন। ওই পরিমাণ অর্থ না দিলে তিনি কোন দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। এজন্য উপজেলায় বিভিন্ন প্রকার দলিল রেজিস্ট্রির হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া তিনি দলিল লেখক এবং দাতা গ্রহীতাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। তার আচরণে ভদ্রতা-সভ্যতার লেশমাত্র নেই। তিনি প্রকাশ্যে দলিল প্রতি অর্থ দাবি করেন। অন্যথায় দলিল সম্পাদন বন্ধ রাখেন।