নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে এসিআই কোম্পানীর কনজুমার ব্যান্ড গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও মামলায় জর্জরিত হওয়ার প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। রবিবার, ৯ জুন দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মোঃ শফিকুল ইসলাম খান (সোহেল) লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজ নামে টাঙ্গাইল শহরে সুনামের সাথে ১৯৯৮ খ্রি. হতে ব্যবসা পরিচালনা করে গত ১০-০৮-২০১৫ খ্রি. এসিআই কোম্পানীর কনজুমার গ্রুপের পরিবেশক হিসেবে টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার, বাসাইল উপজেলায় নিয়োগ পাই। আমাকে নিয়োগ দেন এসিআই কোম্পানীর সুপারভাইজার এস এম সেলিম রেজা ওরফে সেলিম হোসেন। নিয়োগ দেয়ার সময় আমার নিকট থেকে আমার নিজ স্বাক্ষরিত সাদা ৫টি চেক এবং স্বাক্ষরিত সাদা প্যাড জমা নিয়ে নেয়।
আমি মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজ কোড নং RC15CI এই কোডে নগদে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকি। এর কিছুদিন পর কোম্পানীর জোনাল ম্যানেজার আবুল কালাম তার নিজ নামের কোড RC15CY তার চাকুরির পদমর্যাদা দিয়ে পোর্টফুলে বিভিন্ন পরিবেশকের কাছে পণ্য পাঠান। আমি টাঙ্গাইলে ঐ পণ্য গ্রহণ করতে রাজি না হলে তার সুপারভাইজার এস এম সেলিম রেজা ওরফে সেলিম হোসেন দ্বারা আমাকে পণ্য গ্রহণ করতে রাজি করায় এই বলে যে, তিনি আমাকে এই পণ্য বিক্রির কমিশন এবং গোডাউন ভাড়া দেবেন। তবে এই পণ্য অনত্র্য বিক্রি হবে। পরবর্তীতে আমার অজ্ঞাতসারে আবুল কালাম আমার ফার্মের নাম মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজ প্রোঃ আবুল কালাম এই নামে আরেকটি কোড খুলেন RC15DI, এই কোডের পণ্যও আমার নিকট পাঠান এবং আমাকে কমিশন ও গোডাউন ভাড়া দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এই পণ্য সুপারভাইজার সেলিম হোসেন তার বিক্রয় প্রতিনিধির দ্বারা গাড়ীতে করে আমার পরিবেশক এলাকার বাইরে অনত্র্য নিয়ে যায়। আমি তখন কোন তারিখে কতো পরিমাণ পণ্য তারা নিলো তার হিসাব আমার নিকট সংরক্ষিত রেজিস্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করি এবং রেজিস্টারে বিক্রয় প্রতিনিধির স্বাক্ষর রাখি। কোম্পানীর জিএম জাকির হোসেন সরকার তার স্বাক্ষরের মাধ্যমে ৩ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার পণ্য নেন।
এরপর ২০১৮ খ্রি. আমাকে কোম্পানীর সুপার ডিপো দিবে বলে আমার কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ২ কোটি টাকার পেঅর্ডার এবং স্বাক্ষরিত সাদা ২০টি চেক ও মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজ টাঙ্গাইল ফার্মের প্যাড নেয়। কিন্তু আমার এই ২ কোটি টাকার পেঅর্ডার আবুল কালাম তার নিজ নামীয় দুই কোডে RC15CY, RC15DI জমা করেন। পণ্য নিয়ে যখন শেষ পর্যায়ে তখন আমি আমার টাকার জন্য জাকির হোসেন সরকার, জি এম; মোর্শেদ হাবিব এন,এস,এম; আবুল কালাম, জোনাল ম্যানেজার; এস এম সেলিম রেজা ওরফে সেলিম হোসেন, সুপারভাইজার; মানজির হোসেন, জোনাল ম্যানেজারকে আসামী করে টাঙ্গাইল সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সিআর ৪৯৯/২০২১ মামলা দায়ের করি। উক্ত মামলাটি বিজ্ঞ আদালত আমলে নিয়ে সিআইডি টাঙ্গাইল-এর উপর তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করলে প্রায় ৪ বৎসর তদন্ত করে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ৪০৬, ৪২০, ৪০৮ এবং ১০৯ এই ৪টি ধারায় পাঁচজনের নামে অপরাধ প্রমাণিত হয়।
গত ০৮-০৫-২০২৪ খ্রি. টাঙ্গাইল সদর কোর্টে পাঁচজন আসামীর মধ্যে ৪জন আসামী হাজিরা দিতে আসলে বিজ্ঞ আদালত মামলায় ২নং আসামী মোর্শেদ হাবিব বয়স্ক হওয়ায় তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন এবং ৩নং আসামী আবুল কালাম, ৪নং আসামী এস এম সেলিম রেজা ওরফে সেলিম হোসেন, ৫নং আসামী মানজির হোসেনকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এছাড়া, মামলায় ১ নং আসামী অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। এছাড়া, গত ১৬-০৫-২০২৪ খ্রি. জেল-হাজতে থাকা তিনজন আসামী জামিনের জন্য পিটিশন দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এক পর্যায়ে তারা আমার জামানতকৃত চেকের মধ্যে ৩টি চেক দ্বারা চেক ডিজঅনার করে এসিআই কোম্পানীকে দিয়ে ঢাকা জজ কোর্টে মামলা (নং- ৯০৯, ৯১০, ৯১৩) দায়ের করে; যা চলমান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এসিআই কোম্পানী মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজ প্রোঃ আবুল কালাম, কোড নং- RC15DI এর নিকট টাকা পাবে। কিন্তু কোম্পানী মাহী এন্টারপ্রাইজ প্রোঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম খান সোহেল কোড নং- RC15CI এর কাছে কোন প্রকার টাকা পাবে না। এটা কোম্পানী লেজার স্ট্রেটমেন্টে লিপিবদ্ধ আছে। যেহেতু তিনি নিজে মেসার্স মাহী এন্টারপ্রাইজ প্রোঃ আবুল কালাম, কোড নং- RC15DI নই, সেহেতু তাকে উক্ত সকল প্রকার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে পলাতক ১নং আসামী জাকির হোসেন সরকারকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করেন। কোম্পানীর দায়ের করা ঢাকা জজ কোর্টে তার বিরুদ্ধে তিনটি চেক ডিজঅনার মামলা প্রত্যাহার এবং ব্যবসা বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেয়ার জন্য এসিআই কোম্পানীর কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবী করেন।