ঘাটাইল প্রতিনিধি: ‘রাইত আর দিন নাই, বৃষ্টি আইলে ছোট ছোট পোলাপান নিয়া ঘরের এক কোনায় বইয়া থাকি। বৃষ্টির পানিতে উঠান ভিজবার আগে ঘর ভিজা যায়। মেলা মানুষ এইহান থাইকা চইলা গেছে। আমাগো যাওয়ার কোনো জায়গা নাই, থাকলে এইহানে আর থাকতাম না।’ কথাগুলো বলছিলেন ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের সানবান্দা সরকারি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা নূরজাহান বেগম (৪৫)। শুরুতে এখানে ৬০টি পরিবারের বসবাস থাকলেও নানা সমস্যার কারণে অন্যত্র চলে গেছে ৩৪টি।
সানবান্দা সরকারি আবাসন প্রকল্পে ঘর রয়েছে ৬০টি। বেড়া ও ছাউনি টিনের। ঘরগুলো নির্মাণ করা হয় ২০০৫ সালে। এখন পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি। কোনো কোনো ঘরের বেড়ার নিচ দিয়ে অনায়াসে কুকুর-শেয়াল প্রবেশ করে আরেক প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যেতে পারবে। ঘরের চালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। কোনো ঘরেই ছাউনির টিন আর আস্ত নেই। মরিচা ধরে বড় বড় ফুটো হয়ে গেছে। ফুটো ঢাকতে ব্যবহার করা হয়েছে ছেঁড়া কাঁথা ও পলিথিন। আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখলেই ভয় জাগে বাসিন্দাদের মনে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিশু ও বয়স্কদের।
ষাটোর্ধ্ব শামসুল হক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ঘরের চালের ফুটায় পলিথিন দিয়া হিপি (ছাপ) দেওয়ার সময় পইড়া যাইয়া আমার মাঞ্জা (মাজা) ভাইঙা যায়। বুড়া মানুষ। বৃষ্টির দিন আইতাছে। কত রাইত (রাত) যে ঘুম না পাইরা বইয়া থাকন লাগব, তা আল্লাহ-ই বালা (ভালো) জানে।’
মমতা বেগম (৬৫) বলেন, ‘কেউ আমাগো খোঁজ নেয় না। ঈদের মধ্যে সাহায্যের জন্য মেম্বর-চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তারা কয়; টিএনওর (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) কাছে যাইয়া কও, আমরা দিবার পামু না।’ গত রোববার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির পানি থেকে ঘরের আসবাবপত্র বাঁচাতে বাসিন্দাদের মধ্যে শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি।
আবাসন প্রকল্পের মর্জিনা বেগম বলেন, ‘মেলা (অনেক) দিন আগে আন্নেরা আরও একবার আমাগো এনু আইছিলান, ঘরের কোনো কাম (কাজ) তো কইরা দিলান না।’
ওই আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের মাধ্যমে নিযুক্ত সভাপতি সফর আলী বলেন, যাওয়ার মতো কোনো জায়গা না থাকায় এখানে পড়ে আছেন তারা। তিনি এ বিষযে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুম মিয়া জানান, আবাসনের অনেক ঘর দিয়েই বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। বসবাসের একেবারেই অনুপোযোগী।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ঘাটাইল উপজেলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সদস্য সচিব কিশোর কুমার দাসের ভাষ্য, আবাসন প্রকল্পগুলোর দুরাবস্থার কারণে বাসিন্দাদের প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। সানবান্দায়ও যদি এরকম হয় তবে ওপর মহলে প্রস্তাব পাঠানো হবে যেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নতুন ঘর নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা যায়।
আবাসন প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান বলেন, আবাসন প্রকল্প সংস্কারের জন্য ওপর মহলে চিঠি দেওয়া আছে।