নাগরপুরের নাবিক সাব্বিরকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলা হলো

দুর্ঘটনা নাগরপুর ফিচার

নাগরপুর প্রতিনিধি: অবশেষে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মির ৬৬ দিন পর নাবিক সাব্বির হোসেন নাগরপুরে তার নিজ বাড়ি ফিরেছেন। এতে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। সাব্বিরের স্বজনদের চোখে পানি থাকলেও মুখে আনন্দের হাসি। সাব্বিরকে দেখতে বন্ধু-বান্ধবসহ এলাকাবাসী ভিড় করছেন।

এর আগে মঙ্গলবার, ১৪ মে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (এনসিটি) নম্বরে এসে ২৩ নাবিক পৌঁছানোর পরে তারপর বৃহস্পতিবার, ১৬ মে সকালে টাঙ্গাইল শহরের আদালত পাড়া বড় বোন মিতু আক্তারের বাসায় পৌঁছান নাবিক সাব্বির হোসেন। এখানে দুধ দিয়ে গোসল করানো হয় সাব্বিরকে। এরপর ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ও মিষ্টি মুখ করান সাব্বিরের মা ও বোন। পরে নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া নিজ গ্রামে ফিরেন হারুন অর রশীদ ও সালেহা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে সাব্বির।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জেলার নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিগত ২০১৪ সালে থেকে এসএসসি পাস করে। টাঙ্গাইল শহরের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে বিগত ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্রগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করে সর্বশেষ বিগত ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী নেন।

সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, ঈদের সময় সাব্বির আমাদের পাশে ছিল না। যে সময়টা কাটালো আমরা সব সময় চিন্তায় ছিলাম। ঈদ গেছে আমরা বলতে পারবো না আনন্দ কি? কোন আনন্দ ভোগ করতে পারি নাই। আল্লাহ আমাদের কাছে আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার শুকরিয়া। সাব্বির আমাদের কাছে এসেছে এখন আমাদের ঈদ। সাব্বিরের মা সালেহা বেগম টাঙ্গাইল নিউজবিডিকে বলেন, আজকে আমাদের অনেক খুশি। এই খুশিতে চোখে জ্বল ভাসছে। দেশবাসীরসহ সবার দোয়া ছিল। দশের দোয়ার সাথে আমাদের দোয়াও ছিল আজ সাব্বির আমাদের কাছে ফিরে আসছে আল্লাহ কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া।

নাবিক সাব্বির হোসেন বলেন, মুক্তি আগের দিন থেকে মুক্তির পরের দিন পর্যন্ত আমাদের ঘুম হয়নি। আমরা এতোটা উত্তেজিত ছিলাম এতোটা খুশি ছিলাম। মুক্তি পাওয়ার পর সবাই আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি, কোলাকুলি করেছি। সবাই কান্নাকাটি করেছি। তিনি জানান, ভয়ের বিষয় ছিল, জলদস্যুরা সময় অসময়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তো, সে সময় আমরা ভীষণ আতঙ্কিত হতাম। নেভির জাহাজ আমাদের জাহাজের আশপাশে আসলে তারা আমাদের সে সময় মুভ করতে দিত না।

জিম্মি হওয়ার বর্ণনা দিয়ে সাব্বির আরো বলেন, যেদিন জলদস্যুদের কবলে পড়ি তখন আমি ডিউটি শেষ করে কেবিলে চলে গেছি। ওই সময় যারা ডিউটি অফিসার ছিল তারা স্পিকারে ঘোষণা দেন যে সন্দেহজনক পাইরেস আমাদের দিকে এপ্রোচ হচ্ছে। সে সময় আমরা সবাই ব্রিজে চলে যাই। তারপর আমাদের ক্যাপ্টেন স্যারসহ অফিসাররা ছিল এদেরকেও জিম্মি করে। পরর্বতীতে আমরাও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হই। আজ বাবা-মা বোনসহ সবাইকে পেয়ে খুবই আনন্দ লাগছে।

উল্লেখ, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত (১২ মার্চ) ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের দিকে যায়। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনাপাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত হয়ে নাবিকরা বাংলাদেশের স্বজনদের কাছে ফিরলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *