নাগরপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার নাবিক সাব্বিরের বাড়িতে ঈদের আনন্দ নেই। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ থেকে অপহরণ হওয়ার খবর জানার পর থেকেই ছেলে সাব্বিরের মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন বৃদ্ধ মা-বাবা। বাড়িতে বসে নামাজ পড়ে সন্তানকে ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে চলেছেন তারা। মাঝে মধ্যেই ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কিনা তা দেখছেন। এই বাবা-মা চাওয়া, তাদের সন্তানকে যেন দ্রুত মুক্ত করে আনা হয়।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি সাব্বির উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদ-ছালেহা বেগম দম্পতির ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাব্বির জেলার নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করে টাঙ্গাইল শহরের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে পাস করে এমভি আব্দুল্লাহ নামের পণ্য বহনকারী জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন তিনি।
সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর ছেলেই ঈদের কেনাকাটা করেন পরিবারের জন্য। এবার কোনো কিছুই কেনাকাটা হয়নি। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন বাবা-মা। জলদস্যুরা ছেলের সঙ্গে কেমন আচরণ করছে এমন নানা চিন্তায় হারুন অর রশিদ-ছালেহা বেগম ভেঙে পড়েছেন।
সাব্বিরের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর একদিন মাত্র ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর আর কথা হয়নি। আমি ও আমার স্ত্রী ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকি কখন সাব্বির কল দিয়ে বলবে ভালো আছি, চিন্তা করো না তোমরা। আমরা গতবছর ছেলের সঙ্গে ঈদ করেছি; এবারও আশায় আছি। জানি না করতে পারবো কি না। সরকারের কাছে দাবি, অতি দ্রুত আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাই যেন তাদের বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসে।
সাব্বিরের মা সালেহা বেগম বলেন, গতবার আমার ছেলে আমাদের সঙ্গে ঈদ করেছিল। এবার আমার ছেলে ঈদ করতে পারবে কিনা জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমি শুধু আমার ছেলেকে চাই। আমরা ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। ছেলে বাড়ি না আসলে আমাদের আর ঈদ করা হবে না। আমার আবেদন সরকার যেন ঈদের আগেই সবাইকে ছাড়িয়ে আনে।
সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার বলেন, দস্যুদের কবলে আটক হওয়ার সময় আমার ভাই বলেছিল ২০-২২ দিনের খাবার আছে। তারপর আর কথা হয়নি আমার ভাইয়ের সঙ্গে। কেমন আছে তাও বলতে পারবো না। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি আমরা। সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইকে যেন তারা ফিরিয়ে আনে।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, সাব্বিরের পরিবারের খোঁজ খবর রাখছি। ঈদ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে ঈদ উপহার পাঠানো হবে।