নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদে ঘরমুখো মানুষের যেন ভোগান্তি না পোহাতে হয় সে জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ান ওয়েতে (একমুখী) যানবাহন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সাধারণ মানুষের জন্য এ ১৩ কিলোমিটার রাস্তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় প্রতি বছরই।
তাই এবার ঈদে গাড়ির চাপ কমাতে শুধু উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনের জন্য মহাসড়কের এ অংশটি বরাদ্দ থাকবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোলচত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে করে যানজট অনেকটা কমে যাবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এ সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে।
তিনি আরো জানান, ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে, কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রোল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারে সে জন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প, রেস্তোরা নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ইফতার ও সেহরিতে যাতে অসুবিধা না হয় সে জন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের মাঝে পানি, শুকনা খাবার সরবরাহের জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া, এবার ঈদে ৭শত পুলিশ হাইওয়েতে ডিউটি পালন করবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় ঈদের আগের দিন রাস্তা তুলনামূলকভাবে ফাঁকা হয়ে যায়। তখন অনেক ব্যবসায়ীরা ফাঁকা রাস্তায় বাড়ি ফিরতে ছিনতাইকারী বা মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে পারে। সেজন্য সব পুলিশ ঈদের সাত দিন আগে থেকে ঈদের পরের দুইদিন পর্যন্ত হাইওয়েতে ডিউটি করবে যেন কেউ কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন না হয়।
এনা পরিবহনের কুদ্দুস মিয়া নামে এক চালক বলেন, আমরা চাই এক লেনে এই রাস্তা হোক ঈদ সিজনে। তাহলে দেখা যাবে যে ভালোভাবে সেতু পর্যন্ত যেতে পারব। এবার সিরাজগঞ্জ অংশে রাস্তা ভালো যার ফলে যানজট থাকবে না বলে মনে করি।
হানিফ গাড়ির চালক মোখলেস হোসেন বলেন, আমাদের ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কোনো সমস্যা হয় না, তবে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যেতে সমস্যা হয়ে যায়। এ রাস্তায় অনেক চালক আছে যারা গাড়ি ওভারটেকিং করার সময় রং সাইড দিয়ে প্রবেশ করে যার ফলে যানজট লেগে যায়।
সবুজ মিয়া নামে রংপুরগামী এক যাত্রী বলেন, পুলিশ যদি যত্রতত্রভাবে গাড়ি পার্কিং করতে না দেয় রাস্তায়, তাহলে যানজট হবে না। পুলিশ ভালোভাবে ডিউটি করলে এবার কোনোভাবেই যানজট হবে না।
রাজশাহীগামী ফরিদ হোসেন বলেন, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলছে। ঈদের সময় যদি কাজ বন্ধ রাখা হয় তাহলে আশাকরি যানজট বেশি হবে না। এই কাজের জন্য মাঝে মাঝে রাস্তায় গাড়ি থেমে থাকতে হয়। অতিরিক্ত গাড়ির চাপের পাশাপাশি ফিটনেসহীন গাড়ি ও বেপরোয়া গাড়ি চলার কারণ বড় সমস্যা।
টাঙ্গাইল টু বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের লেনের কাজ করা মোনায়েম গ্রুপের সহকারী সুপারভাইজার মিজান বলেন, আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এখন প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে। ঈদের আগে আমরা চার কিলোমিটার রাস্তা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছি।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ বিবিএ নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, মাঝে মাঝে যখন সেতুর ওপর গাড়ির চাপ পড়ে তখন টোল আদায়ে সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক তখন সাময়িকভাবে টোল বন্ধ থাকে। এবার টোল বক্স বৃদ্ধি করে ৮ থেকে ১০টা বসানো হবে।