মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলা সদরে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ডাকবাংলো ও আবাসিক ভবনের প্রায় ৯৫ শতাংশ জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। দখলকারীরা রাতের আধারে বাংলোর সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভেঙে ভিতরে দখলের চেষ্টাকৃত জায়গায় টিন দিয়ে ঘেরাও ও ইট দিয়ে ঘর নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে। দখলকৃত ওই জায়গার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা হবে বলে স্থানীয়রা জানান।
জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পুষ্টকামুরী মৌজায় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের এসএ ৬০৭ বিআরএস ৮৯২ দাগের ১ নং খতিয়ানে ৮৩ শতাংশ ও এসএ ৬০৮, বিআরএস ৮৯১ দাগে ১২ শতাংশসহ মোট ৯৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে। জায়গার চারপাশে রয়েছে সীমানাপ্রাচীর। এখানে গত ষাট বছরের বেশি সময় ধরে স্থাপনা নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সীমানার ভিতরে একপাশে ডাকবাংলো ও অপরপাশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন। হঠাৎ করে রাতের আঁধারে ডাকবাংলোর সীমানা প্রাচীর ভেঙে জায়গা দখলের চেষ্টায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে মূল্যবান এই জায়গা দখল হওয়ার চেষ্টা চললেও অজ্ঞাত কারণে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জায়গা রক্ষায় জোড়ালো ভূমিকা রাখছেন না বলে স্থানীয় অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেনের বাসভবনের সীমানা ঘেষা সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের এই ডাকবাংলো ও আবাসিক ভবন। প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি থাকাকালীন সময়ে তাঁর বাসা সংলগ্ন ডাকবাংলোর বেশ কিছু জায়গা তিনি টিন দিয়ে ঘেরাও দিয়ে দখলে নেয়; যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
জানা গেছে, ওই জমির মধ্যে এসএ ৬০৭ দাগে ৮৩ শতাংশ পুষ্টকামুরী গ্রামের মানিক স্যানাল নিজেদের জায়গা দাবি করে বেশ কয়েকজনের কাছে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। অন্যদিকে এসএ ৬০৮ দাগে ১২ শতাংশ জায়গা একই গ্রামের নাদিম হোসেন পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে ইতোমধ্যে কয়েক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছেন। সড়ক ও জনপথের ৮৩ শতাংশ জায়গার মধ্যে প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেন মানিক স্যানালের কাছ থেকে ২০ শতাংশ জায়গা রেজিস্ট্রি বায়না করে টিন দিয়ে ঘেরাও দিয়ে নিজের দখলে নিয়েছেন।
এছাড়া প্রয়াত এমপির ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শামীম আল মামুনের ছোট ভাই শাহীন মিয়া ৮ শতাংশ জায়গা রেজিস্ট্রি বায়না করেছেন। ৬০৮ দাগের ১২ শতাংশ থেকে এমপির চাচাতো ভাই সাখাওয়াত হোসেন সারে চার শতাংশ জমি ক্রয় করে তিনিসহ আরো কয়েক ব্যক্তি ডাকবাংলোর সীমানা প্রাচীর রাতের আধারে ভেঙে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করছেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ থেকে দেখে আসছি এই জায়গায় সিএনবি’র ডাকবাংলো। জমির কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় মূল মালিকের ওয়ারিশানের সঙ্গে অর্ধা-অর্ধি ভাগাভাগির চুক্তিতে টাকা খরচ করে কাগজপত্র ঠিক করেছি। কিন্ত এখন তারা অনেকে কথা ঠিক রাখছেন না। তিনি মাত্র সারে চার শতাংশ জমি তার নামে রেজিস্ট্র্রি বায়না করেছেন বলে জানান। এদের মধ্যে কয়েকজনে কয়েক শতাংশ জায়গা নিজেদের নামে নাম জারি করেছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে মির্জাপুর পৌর ভূমি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, তাকে ভুল বুঝিয়ে ডাকবাংলোর সীমানা প্রাচীরের বাইরের জমি দেখিয়ে ভিতরের ৬০৮ দাগের ৬ শতাংশ জমি জমা খারিজ করে নিয়েছিল। পরে তিনি প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে জমা খারিজ বাতিলের জন্য মিস মোকদ্দমা দায়ের করেছেন বলে তিনি জানান।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের জায়গা দখল প্রসঙ্গে প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেনের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত বলেন, এই জমির মালিক তো এখন আর সরকার না। এই মালিক পুষ্টকামুরী গ্রামের মানিক স্যানাল। সে মামলা করে আদালতের মাধ্যমে রায় পেয়েছেন। তার কাছে থেকে ২০ শতাংশ জমি আমার বাবা প্রয়াত এমপি একাব্বর হোসেনের নামে রেজিস্ট্রি বায়না আছে। খারিজ হলে দলিল করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রয়াত এমপি’র ব্যক্তিগত সহকারী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শামীম আল মামুনের ছোট ভাই শাহিন মিয়া জানান, ৩ বছর আগে তিনি মানিক স্যানালের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি বায়না মূলে ক্রয় করেছেন।
মানিক স্যানাল জানান, ৬০৭ দাগের ৮৩ শতাংশ জমির মালিক তার পূর্ব পুরুষগণ। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর অধিগ্রহণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ব্যবহার করেছে। বর্তমান জরিপে জায়গাটি ১নং খতিয়ানে আন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ট্রাইবুনালে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেছি। আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি কয়েকজনের সঙ্গে রেজিস্ট্রি বায়না করেছি বলে তিনি জানান।
নাদিম মিয়াও ৬০৮ দাগের ১২ শতাংশ জমি তার পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর দীর্ঘদিন তা ব্যবহার করেছে। এখন হাল রেকর্ড তাদের নামে থাকায় তারা একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছেন।
মির্জাপুর সড়ক ও জপথ অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম হোসাইন বলেন, এর আগেও একটি চক্র আমাদের ডাক বাংলোর জায়গায় অবৈধভাবে কাজ করতে চেয়েছিল। থানায় অভিযোগ করে কাজ বন্ধ করা হয়েছিল।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর মির্জাপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম মোল্লা জানান, সড়ক ও জনপথের ওই জায়গায় কারো কাজ করার সুযোগ নেই। কেউ কাজ করার চেষ্টা করলে আমরা তা বন্ধ করে দিব।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমেরী খান জানান, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। ডাকবাংলোর জায়গার দখলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ডাকবাংলোর সীমানা প্রাচীর ভেঙে দখল চেষ্টার অভিযোগ পেয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উভয়পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।