সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে হাতে ভাজা ছোট ছোট লালচে মুড়ির। রাসায়নিক মুক্ত, স্বাদ বেশি হওয়ায় রমজান মাসে কদর বেড়েছে হাতে ভাজা মুড়ির। বাণিজ্যিক কারখানায় তৈরি এসব মুড়ি আকারে যেমন বড়, দেখতেও বেশ আকর্ষণীয় ধবধবে সাদা মুড়িতে সয়লাব বাজার এবং বাজারে চাহিদা রয়েছেও বেশ। ক্রেতারা বলছেন রূপে না হলেও স্বাদে ভরপুর দেশীয় প্রক্রিয়ায় হাতে ভাজা মুড়ি। সারা বছরের তুলনায় রমজানে মুড়ির চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ। বিশেষ করে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
বর্তমানে উপজেলার কৈয়ামধু, কালিদাস, বেড়বাড়ী ও রতনপুর গ্রামের শতাধিক পরিবার আংশিকভাবে মুড়ি ভাজা পেশার সঙ্গে জড়িত। বছরজুড়ে মুড়ির চাহিদা ও আয় না থাকায় সখীপুরে মুড়ি ভাজার সঙ্গে জড়িত পরিবারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বাজারে আলাদা করে মুড়ির চাল কিনতে পাওয়া গেলেও মুড়ি হাতে ভাজতে বেশি ব্যবহার করা হয় ব্রি-২৮ জাতের ধানের চাল। এর জন্য প্রথমে বাজার থেকে বাছাই করে ভালো মানের ধান কিনে সেদ্ধ করে শুকিয়ে চাল বের করতে হয়। পরে প্রতিবার ৪০০-৫০০ গ্রাম চালের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে লবণপানি মিশিয়ে মাটির পাতিলে ১৫ মিনিটের মতো ভেজাতে হয়। একই সময়ে অপর চুলায় মাঝারি আকারের মাটির হাঁড়িতে গরম হতে থাকে বালু। নির্দিষ্ট সময় পর গরম চাল ঢেলে দেওয়া হয় গরম বালুর হাঁড়িতে। সঙ্গে সঙ্গেই একজন ওই হাঁড়ি দোলাতে থাকেন, পট পট শব্দে মুড়িতে পরিণত হয় প্রতিটি চাল। সঙ্গে সঙ্গে বালুসহ মুড়ি ঝাঁঝরে ঢেলে দেওয়া হয়। এরপর একটি মোটা শলাকা দিয়ে নেড়ে মুড়ি ও বালি পৃথক করে প্রস্তুত হয় হাতে ভাজা সুস্বাদু মুড়ি।
কালিদাস গ্রামের জলধর সরকার বলেন, হাতে ভাজা এসব মুড়ি সখীপুর উপজেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলা ও রাজধানী ঢাকাতেও সরবরাহ করা হয়। সারা বছর তেমন একটা বেচা-বিক্রি থাকে না। কিন্তু রোজার আগে বিক্রি ভালো হয়। এই গ্রামের স্বল্প আয়ের আরও প্রায় ২০-২৫টি পরিবার মুড়ি ভাজার সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে উপজেলার কৈয়ামধু গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আলাউদ্দিন-ফাহিমা দম্পতি। স্বামী মুড়ির চাল ভাজছেন আর স্ত্রী ফাহিমা বালুর পাতিল গরম করছেন। এভাবে দুজনে মিলেমিশে মুড়ি ভাজার কাজ করছেন।
আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামে এখনো প্রায় ৩০টি পরিবার মুড়ি ভাজা পেশার সঙ্গে জড়িত। ইতিমধ্যে কমপক্ষে ১০ মণ মুড়ি বিক্রি করেছি। রোজার আগে ঢাকার এক ব্যবসায়ী পুরো গ্রাম থেকে ৫০ মণ মুড়ি নিয়ে গেছেন। তিনি আরও জানান, এক মণ চালের মুড়ি ভাজতে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। বাড়ি থেকে চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করা যায়। এক দিনে দুজন মানুষ পরিশ্রম করে সর্বোচ্চ দুই মণ চালের মুড়ি ভাজা যায়। সারাদিন আগুনের কাছে থাকা খুব কষ্টকর। এরপর যে লাভ হয় এতে প্রকৃতপক্ষে পোষে না।
সখীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, বাজারে পাওয়া মেশিনে তৈরি মুড়িতে রাসায়নিক সার মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। তাই দাম একটু বেশি হলেও রমজান মাসে হাতে ভাজা মুড়িই বেশি কেনা হয়। এ ছাড়া হাতে ভাজা মুড়ি মেশিনের মুড়ির চেয়ে স্বাদ বেশি।
সখীপুর পৌর শহরের মুড়ি ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া ও তমছের আলী বলেন, রমজান উপলক্ষে মুড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ে। ইফতারে যেন মুড়ি ছাড়া চলেই না। বিশেষ করে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বাড়ে পাঁচ-ছয় গুণ। আমরা ১০০ টাকা কেজি কিনে এনে বিক্রি করি ১২০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য জিনিসের তুলনায় মুড়ির দাম না বাড়ায় মুড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো কাজের আগ্রহ হারাচ্ছেন।