সুলতান কবির: মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের মির্জা বংশের সন্তান এবাদত মির্জার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। এবাদত মির্জা জন্মসূত্রে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। জোট সরকারের আমলে একক আধিপত্য বিস্তার করে দাপটের সাথে চলাফেরা করেছেন তিনি। বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলেও এবাদত মির্জা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ও প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তার সাথে আতাত করে দুই যুগ ধরে অবৈধভাবে বালুর ব্যবসা করে আসছেন। গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য ও বহুতল ভবন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহন এলাকায় সরকারে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একাব্বর হোসেন সেতু সংলগ্ন অবৈধ মাটির ঘাট করেছে এবাদত মির্জা। বালুর ঘাটে দুইটি ভেকু মেশিন বসিয়ে শত-শত ট্রাক দিয়ে অন্যত্র মাটি বিক্রি করছেন। সেতুর নিচ থেকে মাটি কেটে বিক্রি করায় একদিকে হুমকিতে পড়েছে কোটি টাকার সেতু। অন্যদিকে, ট্রাক চলাচলের কারণে সরকারি রাস্তা খানাখন্দে পরিনত হচ্ছে। প্রতিদিন রাত ৮টা বাজলেই চলে তার কর্মযজ্ঞ। দেখা মিলে ক্ষমতাধর বিএনপি নেতা এবাদত মির্জার। তিনি বলেন, ভাল করে ছবি তুলে নেন। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা পরিচালনা করে থাকি। গর্ব করে তিনি আরো বলেন, আমি বিএনপি করলেও আওয়ামী লীগের নেতারা আমার সামনে কিছু বলতে পারবে না। কারণ আমাদের বংশে বিএনপিও আছে- আওয়ামী লীগও আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানায়, এবাদত মির্জা দেশে শুরুতে কোন কাজে সুবিধা করতে না পেরে বিদেশে চলে যায়। বিদেশ থেকেও সুবিধা করতে না পেরে আবার দেশে চলে আসেন। দেশে এসেই বংশাই নদী থেকে বালু বিক্রি শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দুইযুগে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। গড়ে তুলেন বিশাল আকারে অট্টালিকা ও সাম্রাজ্য। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায় ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে কোটি-কোটি অর্থ কামিয়ে সেই অর্থ বিএনপির কর্মসূচিতে খরচ করেন। সম্প্রতি তিনি জেল খেটে বের হয়ে আসছেন। জেল থেকে বের হয়ে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। নদীর পাড়ে অন্যের ফসলি জমিতে জোরপূর্বক মাটি কেটে নামেমাত্র টাকা দেয়। জমির মালিকারা কিছু বললে তার বাহিনী লাগিয়ে দেয় ওই জমির মালিকদের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উপজেলায় শুধু এবাদত নয়, এবাদতের মতো আরো শতাধিক অবৈধ মাটির ঘাট রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, রাত হলে ওই মাটির ঘাটের বেপরোয়া ট্রাক চলাচল করে। ট্রাক চলাচলের কারণে সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারেন না । রাস্তার পাশে বাড়ি-ঘরগুলোতে ধূলার স্তুপ পড়ে যায়। রান্না করা খাবার নষ্ট হয়ে যায়। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমন কর্মযজ্ঞের অবসান চায় তারা। তারা আরো জানায়, প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে পুনরায় তারা এ কর্মযজ্ঞ চালায়।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান জানান, বিষয়টির সম্পর্কে অবগত হয়ে গত মঙ্গলবার ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে এবাদত মির্জার বালু ঘাটে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা হয়। অভিযান পরিচালনা করে তিনটি ট্রাক জব্দ ও ম্যানেজারকে আটক করে ৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, মির্জাপুরে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের রুখতে প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।