ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইলে কাঠচোরদের সাথে বনরক্ষকদের সখ্যতায় উজার হচ্ছে শালবন। গোড়া থেকে চারা গজায় বলে স্থানীয়রা শালগাছকে চিনে গজারি গাছ নামে। সরকারিভাবে এ গাছ কাটা নিষিদ্ধ হলেও জাতের মা গাছগুলো আগেই হত্যা করা হয়েছে। এখন বলি দেওয়া হচ্ছে শিশু চারাগুলোকে। ঘাটাইলের বনে দিনে বা রাতে প্রতিনিয়ত শাল গজারির বনে রক্ত ঝড়ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ঘাটাইলের সংরক্ষিত বনের শাল গজারি কাটার যেন উৎসব চলছে। এরই ধারবাহিকতায় গত ১৩ জানুয়ারি শনিবার কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকে ১০৫টি গজারি গাছের টুকরো জব্দ করে বন বিভাগ। ওইদিনই একটি মিনিট্রাক ভর্তি গজারি এবং আকাশমণির ২১৭ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়।
বন বিভাগের ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার সাতশ ১১ একর। ৯০ এর দশকে সামাজিক বনায়ন নামে বন বিভাগের কর্মসূচিটি আঘাত হানে প্রাকৃতিক এ বনে। ফলে দেশীয় বৃক্ষের স্থানে ধীরে জায়গা দখল করে নেয় বিদেশী বৃক্ষ। প্রাকৃতিক অন্যসব গাছের সঙ্গে বনে রাজত্ব করা শাল-গজারিও এ বন থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে। যা কিছু অবশিষ্ট আছে তাও আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর এর জন্য এলাকাবাসি দায়ী করলেন বন বিভাগের লোকসহ অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী এবং কাঠচোর চক্রকে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, এই তিন শ্রেণির লোকই নাকি একই প্রকৃতির। একসময় কাঠচোর চক্র রাতের আঁধারে এ গাছ কাটত। কিন্তু সরেজমিনে বন বিভাগের বটতলা ও ঝড়কা বিটের অন্তর্গত বগা, খাগরাটা, কুশারিয়া ও ছনখোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় লোকচক্ষুর আড়ালে নয়; প্রকাশ্যে, নির্ভয়ে এক শ্রেণির লোক কর্তন-নিষিদ্ধ গজারি বৃক্ষ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
বটতলী ও ঝড়কা বন বিভাগের ওই দুই বিটের দায়িত্বে থাকা হেলাল উদ্দিন জব্দকৃত কাঠ প্রসঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে আব্দুল হালিম নামে একজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মালামালসহ দুটি গাড়িই জব্দ করে ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসে রাখা আছে।
হেলাল উদ্দিন আরও জানান, ৩ জানিুয়ারি বটতলি বিটের অধিনে বড় আকারের আরও সাত টুকরো গজারি গাছ আটক করা হয়। জানা যায়, শাল গজারি বন সুরক্ষিত রাখতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সরকার সুফল প্রকল্প চালু করে এ উপজেলায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা-র বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, প্রাকৃতিক বন রক্ষায় বেলা কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মধুপুরের শালবন রক্ষায় হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করা হয়েছে। রিট পিটিশনের জন্য মহামান্য আদালত একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। তথ্য প্রমান পেলে ঘাটাইলের বন রক্ষায়ও একই কাজ করা হবে।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শালবন হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য। জীববৈচিত্রের ব্যালেঞ্চ রক্ষার জন্য শালবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের জন্য এই ধরনের শালবন সৃজন করা অনেকটাই অসম্ভব। তাই এ বন রক্ষার্থে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদ রহমান গজারি গাছ জব্দ করার কথা স্বীকার করে বলেন, বন বিভগের জনবল কম। এ গাছ রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।