টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হত্যাকাণ্ডের ১১ বছরেও বিচার হয়নি!

অপরাধ আইন আদালত টাঙ্গাইল সদর ফিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার ১১ বছরেও শেষ হয়নি। মামলার শুধু তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ এখানো বাকি রয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ এলেই কারাগারে থাকা কোনো আসামি ‍‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ায় তাকে আদালতে আনা হয় না। আবার আসামি এলেও তদন্ত কর্মকর্তা না আসায় চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচারকাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।

 

 

 

মামলাটি টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এদিকে গত ২৯ ডিসেম্বর মামলার বাদী ও ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ ১১ বছরেও বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনদিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ সদর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

২০১৪ সালে এ মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিছুল ইসলাম রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে, এ হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি ছানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।

তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর মধ্য দিয়েই বিচারকাজ শুরু হয়।

এ মামলার আসামি আমানুর রহমান খান রানা আত্মসমর্পণের পর তিন বছর কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার অপর ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি এখনো কারাগারে আছেন। অন্য দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান কাকন, ছানিয়াত খান বাপ্পা এবং আসামি মোহাম্মদ কবির ও ছানোয়ার হোসেন পলাতক। দুই আসামি আনিছুর ও মোহাম্মদ সমির কারাগারে মারা গেছেন। জামিনে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাছির উদ্দিন, ফরিদ আহমেদ ও বাবু।

নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমদ সুমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন।

টাঙ্গাইলের সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট এস আকবর খান জানান, ফারুক হত্যা মামলায় কয়েকটি তারিখে হাজতে থাকা আসামি অসুস্থ থাকায় হাজির করা হয়নি। তাই সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এডভোকেট মনিরুল ইসলাম খান জানান, গত ৯ ডিসেম্বর মামলার তারিখ ছিল। সাক্ষ্য হয়নি। এর আগে অন্তত আটটি ধার্য তারিখে অসুস্থ থাকায় আসামি হাজির করা হয়নি অথবা সাক্ষী হাজির হয়নি। এ জন্য বিচারকাজ পিছিয়ে গেছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ফারুক আহমেদের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ সকালে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দুপুরে শহীদ মিনার চত্বরে গণভোজ এবং সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *